নয়াদিল্লি, ৩০ ডিসেম্বর (হি.স.) : ধোঁপে টেঁকেনি প্রবল বিরোধিতা। নাগাল্যান্ডে আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ার) অ্যাক্ট (আফস্পা বা এএফএসপিএ) ১৯৫৮। নাগাল্যান্ডকে অতি স্পৰ্শকাতর তথা ‘অতি অশান্ত অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচনা করে আজ ৩০ ডিসেম্বর থেকে বলবৎযোগ্য আফস্পা-র সময়সীমা আরও ছয়মাসের জন্য বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর। এক সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ার) অ্যাক্ট (আফস্পা) ১৯৫৮-এর তিন নম্বর ধারায় কেন্দ্ৰীয় সরকারকে প্রদত্ত ক্ষমতার বলে এই পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্ৰীয় সরকারের মতে, সমগ্ৰ নাগাল্যান্ড রাজ্যের পরিস্থিতি এ মুহূর্ত প্রচণ্ড ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ সহযোগিতার প্ৰয়োজন। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৪ ডিসেম্বর বিকেলে নাগাল্যান্ডের মায়ানমার সীমান্ত-ঘেঁষা মন জেলার তিরু ও ওটিং গ্ৰামে আধাসেনার গুলিতে ১৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনার পর নাগাল্যান্ড থেকে আফস্পা বাতিলের জোরদার দাবি উঠছিল। এমন-কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী নেইফিউ রিও-ও সেনাবাহিনীকে প্রদত্ত ‘সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন’ বাতিল করার দাবি তুলেছিলেন। গত ২১ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ড বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের প্রস্তাব গ্রহণ করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। এছাড়া গত ৬ ডিসেম্বর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্ৰী কনরাড সাংমাও ‘সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন’ বাতিল করার দাবি তুলে ট্যুইট করেছিলেন। তাছাড়া আইনটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল উত্তরপূর্ব ছাত্র সংগঠনের যৌথ মঞ্চ নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) ও সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু) সহ নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন ছাত্র ও সামাজিক এবং চার্চ সংগঠনগুলি।
কেবল তা-ই নয়, নাগাল্যান্ডের মন জেলায় সংঘটিত ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে এই আইনের বলে সেনাবাহিনী নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে বলে দাবি করে গত ৭ ডিসেম্বর লোকসভার অধিবেশনে মুলতবি প্ৰস্তাব পেশ করেছিলেন মেঘালয়ের তুরা আসনের সাংসদ তথা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির নেত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার ছোট বোন আগাথা কঙ্খল সাংমা।
তাই রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি বাতিল সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদির পৰ্যালোচনা করতে কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্ৰক গত ২৬ ডিসেম্বর একটি উচ্চস্তরীয় কমিটিও গঠন করে দিয়েছিল। ৪৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলে দেওয়া হয়েছিল কমিটিকে। উচ্চস্তরীয় কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া, নাগাল্যান্ডের মুখ্যসচিব, রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (ডিজিপি), নাগাল্যান্ডে নিয়োজিত আধা সামরিক বাহিনী প্রধান, সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্ৰক এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ প্ৰতিনিধিদের নিয়ে।