স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৪ ফেব্রুয়ারি: বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের কেউ এত দিন মুখ না খুললেও অবশেষে আদানি প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। গতকাল শুক্রবার এক টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ভারতের শেয়ারবাজার খুবই ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত। একটি মাত্র ঘটনা, তা নিয়ে বিশ্বে যতই শোরগোল হোক না কেন, তা দিয়ে এই নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার বিচার করা যায় না। ওই ঘটনায় বাজারের ওপর বিনিয়োগকারী আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন না।জীবনবিমা করপোরেশন (এলআইসি) ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিবৃতির কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আদানি গোষ্ঠীতে এ দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার লগ্নি এমন কিছু মাত্রাছাড়া রকমের নয়। সেই লগ্নি অনুমোদিত সীমার মধ্যেই করা হয়েছে। তা ছাড়া শেয়ারের দরপতন ঘটলেও তারা এখনো লাভেই রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই আদানি গোষ্ঠীর প্রতিটি শেয়ারের ব্যাপক দরপতন শুরু হয়েছে। পতন এতটাই যে, গত ৯ দিনে প্রায় ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূলধন হারিয়েছে ওই গোষ্ঠী। গতকাল শুক্রবার গৌতম আদানি বিশ্বের তৃতীয় ধনীর আসন হারিয়ে ২২ নম্বরে নেমে এসেছেন। তাঁকে বাতিল করে দিতে হয়েছে নতুন শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ প্রক্রিয়া বা এফপিও।হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারচুপি করে সম্পদ বৃদ্ধির গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এ নিয়ে ভারতের বিরোধী দলগুলো বেশ সরব। তারা সংসদে এ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছে। দাবি জানিয়েছে, সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করে অভিযোগের তদন্ত করারও। কিংবা সুপ্রিম কোর্টের গড়ে দেওয়া কমিটিকে দিয়ে তদন্ত করানোর। সরকার কোনো দাবিই না মানায় দুই দিন ধরে সংসদ অচল। এ অবস্থায় মুখ খুললেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
অর্থমন্ত্রী মুখ খুললেন কৌশলে সংসদকে এড়িয়ে। ভারতীয় সংসদীয় পরম্পরা অনুযায়ী অধিবেশন চলাকালে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত সংসদের বাইরে ঘোষণা করা হয় না। বিরোধীদের দাবির জবাবও সংসদের বাইরে দেওয়া সমীচীন নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী সংসদের কোনো কক্ষে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। করলেন এই সপ্তাহের অধিবেশন আগামী সোমবার পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যাওয়ার পর। তা–ও এক টেলিভিশন চ্যানেলে।স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সরকার এখনো এ বিষয়ে সংসদে বিরোধীদের মুখোমুখি হতে চাইছে না। বিজেপির কোনো সংসদ সদস্য অথবা পদধারীও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। অর্থমন্ত্রী শুক্রবার যা বলেছেন, তাতে এটুকু বুঝিয়েছেন, দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হয়নি। তবে শেয়ারবাজারে আদানিদের কারচুপির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি এখনো নীরব।
তৃণমূল কংগ্রেস সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্র এই পরিস্থিতিতে এক নতুন তথ্য জনসমক্ষে এনেছেন। শুক্রবার টুইট করে তিনি বলেছেন, শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া’র (সেবি) অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী সিরিল শ্রফ। তিনি ‘সেবি’র ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনসাইডার ট্রেডিং’ কমিটির অন্যতম সদস্য। আদানি–সম্পর্কিত কারচুপির বিষয়ে সেবি যখন তদন্ত করছে, তখন সিরিল শ্রফের উচিত ওই কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানো। কারণ, মহুয়া লিখেছেন, সিরিল শ্রফের কন্যা গৌতম আদানির পুত্রবধূ।আরেক টুইটে মহুয়া প্রশ্ন তুলেছেন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) ক্ষমতা নিয়ে। তিনি বলেছেন, কারচুপির মারাত্মক অভিযোগ ওঠার পর ‘গ্লোবাল রেটিং’ সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স ডাউ জোন্স তাদের টেকসই সূচক থেকে আদানি গোষ্ঠীকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের এনএসই তা হলে কেন আদানিদের শেয়ারের পুনর্মূল্যায়ন করছে না?