স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ জুলাই। শ্রীলংকার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগপত্র গ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজাপাকসে অধ্যায়ের ইতি ঘটেছে। শ্রীলংকানরা এখন ২০ জুলাইয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য আইনপ্রণেতাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
ততদিন পর্যন্ত রনিল বিক্রমাসিংহেই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট থাকছেন। বিক্ষোভকারীরা যদিও বিক্রমাসিংহেকেও চাইছে না। তারপরও শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন পোদুজানা পেরামুনা পার্টি শুক্রবার বিক্রমাসিংহেকেই প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিয়েছে।অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে বুধবার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেছিলেন বিক্রমাসিংহে। শুক্রবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদে শপথ নিয়েছেন। এবার তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ারও স্বপ্ন দেখছেন।
শ্রীলংকার পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে গতরাতেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি সাংবিধানিকভাবে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু করবেন। ‘এ প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সফলভাবেই হবে’ জানিয়ে তিনি সবাইকে এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।শনিবার শুরু হবে পার্লামেন্টে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া। এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের কাজ হয়ে যাবে এবং ২০ জুলাই নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমপি’রা ভোট দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্পিকার।ক্ষমতাসীন পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় এমপি’রা বিক্রমাসিংহেকেই সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাজাপাকসের পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা আছে। তার দলের ওপর গোটাবায়া রাজাপাকসে পরিবারের আধিপত্য আছে।
তাই তিনি নির্বাচিত হলে শ্রীলংকানরা তাকে মেনে নেবে কিনা সেটি আরেকটি বিষয়। কারণ, রাজাপাকসেদের শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা শ্রীলংকানদের আরেকটি মূল দাবি ছিল, সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ।এসপ্তাহের শুরুর দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এবং দপ্তরেও চড়াও হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়। এক বিক্ষোভকারী সে সময় বিবিসি-কে বলেছিলেন, আগামী দিনগুলোতে রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে আরও বিক্ষোভ-সমাবেশ হবে।“জনগণের কোনও ম্যান্ডেট তার নেই এবং তিনি রাজাপাকসেদের সমর্থক হিসাবে ভালোভাবেই পরিচিত। মানে আমি বলতে চাইছি, নতুন প্রেসিডেন্ট এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেদের সমর্থক হওয়া উচিত হবে না।”কিন্তু শ্রীলংকার বর্তমান পরিস্থিতিতে শিগগির স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশ স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহে।বিবিসির নিউজনাইট প্রোগ্রামে বীরাসিংহে বলেছেন, প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়াম আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে ‘প্রচুর অনিশ্চয়তা’ তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বেইলআউট প্যাকেজ পাওয়ার অগ্রগতি একটি স্থিতিশীল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।ওদিকে, শ্রীলংকার প্রভাবশালী আইনজীবীদের বার অ্যাসোসিয়েশন কোনওরকম কালক্ষেপণ না করে যত দ্রুত সম্ভব রাজাপাকসের উত্তরসূরি নির্বাচন করতে আইনপ্রণেতাদেরকে তাগাদা দিচ্ছে।এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “দেশকে আরও বিশৃঙ্খলায় ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পার্লামেন্টের সদস্যদেরকে তাদের ক্ষমতা সাধ্যমত কাজে লাগাতে হবে।”