স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ০৩ অগস্ট : নগদ হাতে নেই। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যা রয়েছে, তা-ও যৎসামান্যই। তবে সেই টাকাও সরাসরি তুলতে পারছেন না গাজ়াবাসী। ‘মিডলম্যানের’ সাহায্যে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুললে গুনতে হচ্ছে প্রচুর পরিমাণের ‘কমিশন’ও। নগদের অভাবে বাজার থেকে কিছু কেনারও উপায় নেই। খিদে মেটাতে বা প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাতে গাজ়ায় বসবাসকারী প্যালেস্টাইনিরা শুরু করেছেন বিনিময় প্রথা। রুটির বিনিময়ে ডাল, সব্জি দিলে মিলছে চিনি।
গাজ়া শহরে বহু দিন ধরে সেলুন চালাচ্ছেন হিলাল হাবিব। সংবাদমাধ্যম ‘আলজ়াজিরা’কে তিনি বলেন, ‘‘আমার সেলুনে কেউ এক জন বলছেন, যদি তাঁর চুল কেটে দিই তো দু’খানা রুটি দিতে পারেন! মানুষের হাতে নগদ নেই বললেই চলে। শুধু তা-ই নয়, সরকারি খাতে যাঁরা বেতন পান, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও শূন্য।’’
গাজ়া জুড়ে খাদ্যাভাবে হাহাকারের ছবি প্রতি দিনই বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইজ়রায়েলি সেনার হামলা। লেগেই আছে গোলাবর্ষণ। ইজ়রায়েলি সেনার হামলা থেকে প্রাণ বাঁচালেও অনাহার আর খিদের জ্বালা গ্রাস করছে দিনে দিনে। গাজ়ার হাসপাতালগুলি সূত্রে খবর, গাজ়া জুড়ে ইজ়রায়েলি হামলায় শনিবারই মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। তাঁদের মধ্যে থাকা ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন ত্রাণ আনতে গিয়ে।
ইজ়রায়ের সঙ্গে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সংঘাতের কারণে ভেঙে পড়েছে গাজ়ার অর্থনীতি। প্যালেস্টাইনিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। জমানো টাকায় চলছে একাংশের সংসার। তবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টাকা তুলতে পারছেন না প্যালেস্টাইনিরা। তেমনই এক ভুক্তভোগী সাবের আহমেদ জানান, কেউ যদি হাজার শেকেল (ইজ়রায়েলি মুদ্রা) তুললে হাতে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০০ শেকেল। কিন্তু সেই টাকা নিয়ে বাজারে গেলে তা যথেষ্ট নয়। সাবেরের কথায়, ‘‘বাজারে গেলে দু’কেজি ডাল, এক কেজি আটা কিনতে গিয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে ৬০০ শেকেল। সেটাই বড় সমস্যা।’’
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গাজ়াবাসীকে। গাজ়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যু হয়েছে ছ’জনের। ইজ়রায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে এই নিয়ে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৭৫, যার মধ্যে রয়েছে ৯৩ জন শিশু।
দিনের পর দিন হাহাকার বাড়ছে গাজ়ায়! খাদ্যসঙ্কট যেন প্রতি দিনই তীব্রতর হচ্ছে। আর এই সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা। দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছেন গাজ়াবাসীর একটা বড় অংশ। হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে রোগীদের। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন চিকিৎসক-নার্সেরাও!