Friday, February 14, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদপৃথিবীতে গ্রিনহাউজ গ্যাস সঞ্চয়ন রেকর্ড মাত্রায়

পৃথিবীতে গ্রিনহাউজ গ্যাস সঞ্চয়ন রেকর্ড মাত্রায়

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, ২৬ অক্টোবর :   গ্লাসগোর জলবায়ু সম্মেলনের ঠিক আগে পৃথিবীতে গ্রিনহাউজ গ্যাস সঞ্চয়নের নৈরাশ্যের একটি চিত্র উঠে এল জাতিসংঘ সংস্থার এক প্রতিবেদনে, যা মেলে ধরেছে যে উষ্ণায়ন মোকাবেলার লড়াই ঠিক পথে নেই।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে ৪১৩.২ পিপিএমে (১ পিপিএম মানে হচ্ছে প্রতি কেজিতে ১ মিলিগ্রাম) পৌঁছেছে, আর এই বৃদ্ধির হার গত এক দশকে বৃদ্ধির গড় হারের চেয়ে বেশি।

গত বছর করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের কারণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমলেও সার্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে।বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের ঘনত্বে কেন লকডাউনের প্রভাব পড়েনি এবং গ্রিনহাউজ গ্যাসের মাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে উঠে গেল, তার পেছনে আছে কয়েকটি কারণ।মানুষের কর্মকাণ্ড থেকে নিঃসৃত গ্যাস গাছপালা, মাটি ও সাগর শুষে নিলেও এই সক্ষমতা তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য বেশ কিছু বিষয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে।

মহামারীর কারণে গত বছর অনেক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হওয়াসহ কলকারখানা বন্ধ থাকা এবং রাস্তাঘাটে পরিবহন ও চলাচল বন্ধ হয়ে রাস্তা ফাঁকা থাকায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো কমে গিয়েছিল প্রায় ৭ শতাংশ।

কিন্তু বায়ুমণ্ডলে অনেক আগে থেকেই কার্বন ডাই অক্সাইড দূষণ যে পরিমাণে হয়েছে, তার তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানির এই কমে যাওয়া খুবই নগন্য। গত এক দশকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন লাফিয়ে বেড়েছে।

বিবিসি জানায়, কার্বনের পাশাপাশি মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইডও গত ১০ বছরে গড় বার্ষিক নির্গমনের পরিমাণের চেয়ে বেশি মাত্রায় বেড়েছে।তাই গত বছর কার্বন নির্গমন কমলেও বায়ুমণ্ডলে এর মাত্রা এখনও ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার গড় মাত্রার চেয়ে বেশি।

ডব্লিউএমও’র মহাসচিব পেটেরি টালাস বলেছেন, তাপমাত্রা বাড়ানোর এই গ্যাসের রেকর্ড বৃদ্ধি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বড় কারণ হয়ে উঠবে। আর ২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছিল, তা অর্জন দূরে ঠেলে দেবে।“আমরা পথ হারিয়েছি। শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন যোগাযোগ এমনকি পরো জীবনযাত্রা নিয়ে আমাদের নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে,” বলেন তিনি।এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া গ্লাসগো সম্মেলনে কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী ঘোষণা প্রত্যাশা করছেন তিনি।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কী করণীয়, তা ঠিক করতে চলতি মাসের শেষদিন ৩১ অক্টোবর গ্লাসগোতে শুরু হচ্ছে কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজের (কপ) ২৬তম আয়োজন।এবারের সম্মেলনে ২০০ দেশের কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা কী তা জানতে চাওয়া হবে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাব থেকে বাঁচানো যাবে পৃথিবীকে।সম্মেলনের আগে শিশুদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এবার সম্মেলন ‘কঠিন’ হয়ে উঠতে পারে। “আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন, কারণ আমরা ভুল পথে যেতে পারি, আমাদের মধ্যে মতৈক্য নাও হতে পারে, যা এই মুহূর্তে খুব জরুরি। ফলে কঠিন এক পরিস্থিতি। তবে আমি আশা করি, কিছু একটা হবে,” বলেন তিনি।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গতিতে লাগাম পরাতে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ একক দেশ হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমন করে।

তবে চীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নতুন বিনিয়োগ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি শূন্যতে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার পৃথিবীতে গ্রিন হাউজ গ্যাস বাড়িয়ে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে, তার বড় কুফল ভোগ করছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ।

আবহাওয়া চরম হয়ে উঠছে, ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ফসলি এলাকায় মরুকরণ ঘটছে, আবার কোথাও হচ্ছে অতি বৃষ্টি-বন্যা।এসব মিলিয়ে মানুষের জীবন ও জীবিকা বড় হুমকিতে পড়ায় তা নিয়ে উদ্বেগ আজ বিশ্বজুড়েই।

সেজন্যই কার্বন নির্গমন কমানোর দিকে এখন জোর দেওয়া হচ্ছে, যে গ্যাস ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা ধরে রাখে। বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গতি যদি থামানো না যায়, তবে এই শতকের শেষে তা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে যেতে পারে। তখন ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে গ্লাসগো সম্মেলনের আগে লন্ডনে বিক্ষোভ হয়েছে, সড়ক অবরোধ হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে স্পেনের মাদ্রিদে।“গ্রিন হাউজ গ্যাস গোটা পৃথিবীর জলবায়ুকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের হাতে আর সময় নেই। অনেক দেরি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এখনও যদি আমরা কাজ শুরু না করি, তাহলে আর কিছুই করার থাকবে না,” বলেন বিক্ষোভে নামা আলবার্টো।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য