স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১০ মার্চ : পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে সিরিয়ায়। পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে জ্বলছে প্রতিশোধের আগুন। ইতিমধ্যেই সেই আগুনের বলি হতে হয়েছে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে। রক্তক্ষয়ী সংঘাত মূলত চলছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগামীদের। গত ডিসেম্বরেই আসাদ সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী।
সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাতে ‘প্রতিশোধ-হত্যার’ শিকার হচ্ছে আলাওয়াইট নামে এক সংখ্যালঘু শ্রেণি, যাদের বাস মূলত সিরিয়ার উপকূলবর্তী এলাকা লাটাকিয়া এবং টারটসে। গত কয়েক দিন ধরেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই মানুষদের উপর লাগাতার হামলা চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখে বেছে বেছে খুন করা হচ্ছে আলাওয়াইটদের। যে সমস্ত গ্রামে আলওয়াইটদের বাস, সেখানে দেহ স্তূপাকার হয়ে পড়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এমনকি স্থানীয়দের দেহ নিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু কেন বেছে বেছে আলাওয়াইটদের উপর হামলা চালাচ্ছে সরকারের সামরিক বাহিনী? সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ হলেন আলাওয়াইটরা। কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীটি আসাদের আমলে বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। আসাদ নিজে এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় তাঁর আমলে প্রশাসন এবং সামরিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেতে থাকেন আলাওয়াইটরা। কিন্তু আসাদ পরিবারের আমলে পাঁচ দশক ধরে চলা এই ‘পক্ষপাত’ সহ্য হয়নি ইসলামপ্রধান দেশটির সুন্নি জনগোষ্ঠীর। কিন্তু আসাদের প্রভাবে পাল্টা কোনও পদক্ষেপও করতে পারেনি তারা।
আসাদ সরকারের পতনের পরে সিরিয়ায় ক্ষমতায় আসে গোঁড়া ইসলামিক রীতি মেনে চলা সুন্নি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। তার পরেই সরকারি বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় অন্য গোঁড়া গোষ্ঠীগুলি। আক্রমণ নেমে আসে তুলনায় উদার মনোভাবাপন্ন আলাওয়াইটদের উপর। ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশচ্যুত হওয়ার পর বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন আসাদ। সিরিয়ার একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, আলাওয়াইটদের অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন। দেশে নতুন গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সিরিয়ার অনেকেই।