Saturday, January 25, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ নভেম্বর:  যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির মধ্য দিয়ে ইসরায়েল ও লেবাননের ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে বুধবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ এক এক্স পোস্টে লিখেছেন, “এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ইসরায়েলি ও লেবানিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বহু মাস ধরে চলা আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতি।”লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মিকাতিও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যৌথ বিবৃতিতে দিয়ে বলেছে, “এ চুক্তি লেবাননে লড়াই বন্ধ করবে এবং ইসরায়েলকে হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখবে।”

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য নিয়ে চুক্তি করা হয়েছে:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, “স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্যই চুক্তিটি করা হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের বাহিনী প্রত্যাহার করবে। এতে সীমান্তের উভয় পাশের মানুষজন তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবে।

একই সময়ে লেবাননের সেনাবাহিনী ইসরায়েল সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে, যাতে হিজবুল্লাহ সেখানে আবার কোনও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ না করতে পারে।হিজবুল্লাহকে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার অচিহ্নিত সীমান্ত ব্লু লাইন এবং প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে লিতানি নদীর মাঝের এলাকা থেকে যোদ্ধাসহ অস্ত্রও সরিয়ে নিতে হবে এ ৬০ দিনের মধ্যেই। হিজবুল্লাহ যোদ্ধা এবং অস্ত্র সরানো হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় কাজ করবে লেবাননের সেনাবাহিনী।

হিজবুল্লাহর জায়গায় মোতায়েন হবে হাজার লেবানন সেনা:

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চুক্তির আওতায় লেবাননের সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের জায়গায় ৫ হাজার সেনা মোতায়েন করতে পারে।তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে লেবাননের সেনাদের ভূমিকা কী হবে এবং প্রয়োজনে তারা হিজবুল্লাহকে মোকাবেলা করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক বিভক্তিতে জর্জরিত লেবাননে এমন পদক্ষেপে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়া আশঙ্কা আছে।

লেবাননের সেনাবাহিনী এও বলেছে যে, চুক্তির বাধ্যবাধকতা মেনে চলার জন্য তাদের অর্থ, লোকবল এবং হাতিয়ার পর্যাপ্ত নেই। যদিও লেবাননের কয়েকটি মিত্র দেশের সহায়তায় এই সমস্যা দূর হতে পারে।তবে অনেক পশ্চিমা কর্মকর্তা বলছেন, হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং লেবানন সরকারের জন্য দেশের গোটা ভূখণ্ডের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়।

চুক্তির বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্রফ্রান্স:

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ১৭০১ এর পথে হেঁটেই হয়েছে এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ১৭০১ প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে ২০০৬ সালে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।ওই প্রস্তাবনাতেও লিতানির দক্ষিণের এলাকাগুলোতে কেবলমাত্র লেবানন রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর (ইউনিফিল) সদস্য ছাড়া অন্য আর যে কোনও সশস্ত্র কর্মী বা অস্ত্র সরিয়ে ফেলতে করতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু পরে দুই পক্ষই প্রস্তাবনা লঙ্ঘনের দাবি করে। ইসরায়েল বলে, হিজবুল্লাহকে ওই এলাকায় ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে লেবানন বলে, ইসরায়েল তাদের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সামরিক বিমান উড়িয়ে প্রস্তাবনা লঙ্ঘন করেছে।তাই এবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা নজরে রাখতে ইউনিফিল, লেবানন এবং ইসরায়েলের বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় সামিল হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। এই দুই দেশের কাজ হবে চুক্তি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, বলেছেন এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে।যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা (এমটিসি)-এর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা করবে।এ পরিকল্পনায় ‘টেকসই যুদ্ধ বিরতি’ হতে পারে এমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দক্ষিণ লেবাননে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।ইসরায়েলের উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না।”

চুক্তি লঙ্ঘন হলে চলবে আক্রমণ:

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হলে এর জবাব দেওয়ার অধিকার দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ বোঝাপড়ার মাধ্যমে লেবাননে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা বজায় রাখবে ইসরায়েল।“হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করলে এবং অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার চেষ্টা করলে আমরা আক্রমণ করব। সীমান্তের কাছে হিজবুল্লাহ সন্ত্রাসী অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করলে আমরা হামলা চালাব। তারা (হিজবুল্লাহ) রকেট উৎক্ষেপণ করলে, সুড়ঙ্গ খনন করলে কিংবা রকেট ট্রাকে বহন করে আনলে, আমরা আক্রমণ করব,” বলেন নেতানিয়াহু।

বাইডেনও এই মত সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহ বা অন্য কেউ যদি চুক্তি ভঙ্গ করে এবং ইসরায়েলের জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে।” তবে তিনি এও বলেছেন, এই চুক্তিতে লেবাননের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখা হয়েছে।পাল্টা আঘাত হানার অধিকারের যে দাবি ইসরায়েল করেছে তা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ নয় বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, লেবানন বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছিল। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকারের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র একটি চিঠি দেবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য