Monday, March 24, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদলেবাননে যুদ্ধবিরতির পর হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

লেবাননে যুদ্ধবিরতির পর হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৮ নভেম্বর:  দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর লেবাননে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ১৪ মাসের যুদ্ধ ছিল খোদ লেবানন এবং হিজবুল্লাহর জন্যও বিপর্যয়কর।২০২৩ সালের অক্টোবরে লড়াইয়ের শুরু থেকে লেবাননে হাজার হাজার মানুষ মরেছে। হিজবুল্লাহরও মারা গেছেন প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহসহ আরও বহু নেতা। তাদের অবকাঠামোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যুদ্ধের পর পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটি আরেক অজানা বিষয়।তাই যুদ্ধবিরতির পর হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎ কী হবে সে প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করেছেন বিবিসি বৈরুতের এক প্রতিবেদক।

গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের নুয়েরিতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলার তোড়জোড়, স্থানান্তর সতর্কতা জারির মুখে অন্ধকারাচ্ছন্ন গাড়ি ভর্তি রাস্তায় জিনিসপত্র বোঝাই ব্যাগ নিয়ে মানুষের হেঁটে চলা এবং অনিশ্চিত পথে তাদের যাত্রার চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি।প্রতিবেদক জানান, সেদিন কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েলের বিমান হামলার একটি স্থান তারা পরিদর্শনের চেষ্টা করেছেন। সেই হামলা বিকেলে কোনও সতর্কবার্তা ছাড়াই চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে একটি ভবন ধসে পড়ে এবং অন্তত সাতজন নিহত হয়।কিন্তু ওই এলাকায় ঢোকা যায়নি। সেখান থেকে ধীরে ধীরে মানুষ সরে যেতে শুরু করে। এমনকি সেখানে থাকা মানুষজন বিবিসির সংবাদকর্মীদের সেখান থেকে ফিরে যেতে বলেন, কারণ জায়গাটা নিরাপদ ছিল না।

এর ঠিক কয়েক মিনিট পর বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মানে আরও কয়েকটি হামলা হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবেই কাটে বৈরুতের সেদিনের রাত, একাধিক বিস্ফোরণের শব্দে- কয়েকটি দূরে, আবার কয়েকটি কাছাকাছি কোনওখানে।মাথার উপর ইসরায়েলি ড্রোনের চক্কর আর গুলির শব্দের কারণে আরও সতর্কতা জারি হয় এবং মানুষকে নিরাপদ জায়গার সন্ধানে ছুটতে হয়।ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে লেবানন যখন ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়, ঠিক তখনই বৈরুতের ওই এলাকায় চলছিল এমন তুমুল বোমা হামলা। নুয়েরিতে হামলার পরই দুই মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের জঙ্গিবিমান শহরের দক্ষিণ উপকণ্ঠে হিজবুল্লাহর ২০টি লক্ষ্যে আঘাত হানে, যা দাহিহ নামে পরিচিত।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত স্থাপনাগুলোতে তারা আঘাত হেনেছে। বোমা হামলার শব্দে নগরী প্রকম্পিত হয়েছে।এখন অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে লেবাননে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়ে গেছে, কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে:২০২৩ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ৩,৭০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে এমন অঞ্চলে ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ৮৫০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিয়েছে। এসব ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে। কে এর জন্য অর্থ দেবে তা কেউ জানে বলেও মনে হয় না।যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধা প্রত্যাহার হওয়ার পর দক্ষিণ লেবাননে কয়েক হাজার লেবাননী সেনা মোতায়েন করা হবে। তবে কীভাবে তাদের মোতায়েন করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।লেবাননের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, চুক্তির শর্ত পূরণের জন্য যে সম্পদ প্রয়োজন – অর্থ, লোকবল এবং হাতিয়ার- তা তাদের নেই।

তবে এটি কেবল তহবিলের বিষয় নয়। লেবাননের কিছু মিত্র দেশ হয়ত সহায়তা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবে। কিন্তু প্রয়োজনে লেবাননের সেনারা হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মোকাবেলা করবে কিনা প্রশ্ন সেটি।কারণ, সেরকম ক্ষেত্রে তা হবে লেবানিজদের বিরুদ্ধেই লেবানিজদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয়, যা সাম্প্রদায়িক বিভাজন জর্জরিত লেবাননের মতো দেশে সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ।একজন কূটনীতিক বিবিসি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, লেবানন কর্তৃপক্ষ মনে হয় মেনে নিয়েছে যে পরিস্থিতি অবশ্যই বদলাতে হবে। আর তা করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাও আছে বলে তিনি মনে করেন।

যুদ্ধে হিজবুল্লাহও যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, নেতাদের হারিয়েছে, অকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে তাতে সার্বিক পরিস্থিতি কবে ঠিক হবে তা জানা নেই। হিজবুল্লাহ মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে । কেউ কেউ হয়ত বলবেন অপদস্থ হয়েছে।তবে তারপরও এই গোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যায়নি। কারণ, লেবাননে হিজবুল্লাহ কেবল একটি মিলিশিয়া বাহিনী নয়। এটি একটি রাজনৈতিক দলও। পার্লামেন্টে যাদের প্রতিনিধিত্ব আছে। এটি একটি সামাজিক সংগঠনও। শিয়া মুসলিমদের মধ্যে গোষ্ঠীটির গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন আছে।

হিজবুল্লাহর বিরোধীরা খুব সম্ভবত যুদ্ধে এই গোষ্ঠীটির বিপর্যস্ত অবস্থাকে এখন তাদের প্রভাব সীমিত করার একটি সুযোগ হিসাবেই দেখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের আগে হিজবুল্লাহকে প্রায়ই লেবানন রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করা হত।আর সম্প্রতি কয়েক মাসে হিজবুল্লাহর সমর্থক বলয়ের বাইরের মানুষেরা বলাবলি করেছে যে, গোষ্ঠীটি দেশকে এমন এক যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেছে যা ছিল দেশের স্বার্থ পরিপন্থি।নতুন হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়ত ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহর সংঘাতের অবসান ঘটাবে। কিন্তু লেবাননে অনেকেই এখন নতুন অভ্যন্তরীন সংঘাত শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য