স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৭ নভেম্বর: টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার বছরে জন্ম নেওয়া ১১২ বছর বয়সী বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ জন আলফ্রেড টিনিসউড মারা গেছেন। ইংল্যান্ডে সাউথপোর্টের একটি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তার। টিনিসউডের পরিবার এ খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছে।১১৪ বছর বয়সী হুয়ান ভিসেন্ত পি রেজ মোরা মারা যাওয়ার পর গত এপ্রিলে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত পুরুষের খাতায় নাম উঠেছিল টিনিসউডের। লিভারপুল ফুটবল দলের ভক্ত তিনি। তার পরিবার জানিয়েছে, টিনিসউডের শেষ যাত্রা ছিল গান আর ভালোবাসায় সিক্ত।
১৯১২ সালের ২৬ অগাস্ট লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন টিনিসউড। তিনি ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পান। এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিলে গিনেস বুক অব রেকর্ডস তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।১৯৪২ সালে বিয়ে করেছিলেন জন টিনিসউড। তার স্ত্রীর নাম ব্লডওয়েন। লিভারপুলে একটি নাচের অনুষ্ঠানে ব্লডওয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। তাদের কন্যা সুজানের জন্ম ১৯৪৩ সালে। ৪৪ বছরের দীর্ঘ সংসার জীবন কাটানোর পর ১৯৮৬ সালে স্ত্রী ব্লডওয়েনের মৃত্যু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন টিনিসউড জ্বালানি কেম্পানি শেল ও বিপিতে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি অবসর নেন।তার পরিবার জানায়, তিনি ছিলেন বহুগুণের অধিকারী। যেমন বুদ্ধিমান ছিলেন তিনি, তেমনি ছিলেন দৃঢ়চেতা, সাহসী, যে কোনো সংকটে শান্ত, গণিতে মেধাবী এবং দারুণ মিশুক।এর আগে গিনেস বুক অব রেকর্ডসের স্বীকৃতির পর বিবিসি-কে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন টিনিসউড। সে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “তরুণ বয়েসে বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি। প্রচুর হাঁটাচলা করতেন। তবে তিনি নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবেন না।”
তিনি আরও বলেছিলেন, “জন্ম মৃত্যু কারো হাতে নেই, হয় আপনি দীর্ঘজীবী হবেন, নয়ত কম সময় বাঁচবেন।” টিনিসউড বলেছিলেন, তিনি ‘অন্য যে কোনও কিছুর মতো’ ১১২ বছরে পদার্পণকে স্বাভাবিক ভাবেই নেবেন।টিনিসউড তার ১০০ তম জন্মদিনের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টের হলিস রেস্ট কেয়ার নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমে চলে যান।পছন্দের ফুটবল ক্লাব লিভারপুল প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পর টিনিসউডের জন্ম। ১৯০১ ও ১৯০৬ ছাড়া ক্লাবটির জেতা সব কটি ট্রফির খেলা দেখেছেন তিনি।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় টিনিসউডের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময় তিনি ছিলেন ২৭ বছরের তরুণ।
তখন তিনি আর্মি পে কর্পে প্রশাসক হিসেবে কাজ করতেন। তার দায়িত্ব ছিল আটকে পড়া সেনাদের অবস্থান খুঁজে বের করা এবং খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা।২০১২ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর টিনিসউড বরাবরই ইংল্যান্ডের রাজ পরিবার থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে এসেছেন।প্রথমে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেতেন। এলিজাবেথ প্রায় ১৪ বছরের ছোট ছিলেন। এরপর রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকেও তিনি শুভেচ্ছা পেয়েছিলেন।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, তার স্মরণে যে কোনো অনুদান যেন ‘এইজ ইউকে’ বা তাদের পছন্দের কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়।এর আগে, বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষ ছিলেন জাপানের জিরোইমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর ৫৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং ২০১৩ সালে মারা যান।আর বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত নারী হলেন জাপানের ১১৬ বছর বয়সী তোমিকো ইতোওকা।