Sunday, February 16, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদইউক্রেইন: ‘রুশ সেনারা আমাকে ধর্ষণ এবং স্বামীকে হত্যা করেছে’

ইউক্রেইন: ‘রুশ সেনারা আমাকে ধর্ষণ এবং স্বামীকে হত্যা করেছে’

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১২ এপ্রিল।  ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের একটি শান্ত গ্রামীন জনপদে বিবিসির সঙ্গে কথা হয় ৫০ বছর বয়সী আনার (ছদ্মনাম)।আনা জানান, ৭ মার্চ বাড়িতেই ছিলেন তিনি ও তার স্বামী। হঠাৎই এক বিদেশি সেনা জোর করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে।

“অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিয়ে সে আমাকে কাছের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে সে নির্দেশ দিয়ে বলে: ‘পোশাক খুলে ফেলো, নয়তো আমি তোমাকে গুলি করবো’। আমাকে সে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যায়, সে যা বলছে তা না করলে খুন করবে। এরপর সে আমাকে ধর্ষণ করে,” বলেন আনা।আনার বর্ণনায় হামলাকারী একজন তরুণ, ক্ষীণকায় চেচেন যোদ্ধা, যারা রুশ বাহিনীকে সহায়তা করছে।তিনি আরও বলেন, “যখন ওই সেনা আমাকে ধর্ষণ করছিলো, আরও চারজন সেনা সেখানে প্রবেশ করে। আমি ভেবেছিলাম যে আমার হয়তো এটাই শেষ মুহূর্ত। কিন্তু তারা ওই সেনাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আমি আর কখনই তাকে দেখিনি।”

আনার ধারণা রুশ সেনাদের অন্য আরেকটি ইউনিটের কারণে বেঁচে গেছেন তিনি। কিন্তু আনা বাড়ি ফেরে দেখেন তার স্বামীকে গুলি করা হয়েছে, তার পেটে গুলি লেগেছে।আনা বলেন, “তিনি আমাকে রক্ষা করতে আমার পিছুপিছু ছুটেছিলেন, কিন্তু একটি বুলেট তাকে আঘাত করে।”আনা ও তার আহত স্বামী প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। কিন্তু লড়াই চলতে থাকায় আনার স্বামীকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। দুদিন পর তার মৃত্যু হয়।এ ঘটনা বর্ণনা করার সময় একবারও কান্না থামাতে পারেননি আনা। তিনি বিবিসিকে তাদের বাড়ির পেছনের উঠোনে একটি সমাধি দেখান যেখানে তার স্বামীকে কবর দেওয়া হয়েছে।  আনা জানান, তিনি স্থানীয় হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর এখন তাকে মানসিক সহায়তা দিচ্ছে তারা।

যে সেনাদের উপস্থিতির কারণে আনা বেঁচে যান, তারা আনার বাড়িতে কয়েকদিন অবস্থান করেছিলো। আনা জানান, অস্ত্র তাক করে তাকে তার স্বামীর জিনিসপত্রগুলো তাদের দিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় সেনারা।

আনার বাসা থেকে কিছুটা দূরে আরেকটি রোমহর্ষক ঘটনার খবর পায় বিবিসি।সেখানে আরেক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। প্রতিবেশিদের বক্তব্য অনুযায়ী, আনাকে ধর্ষণ করেছিলো যে ওই একই সেনা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সে ওই নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর আনার বাড়িতে যায়।প্রতিবেশিরা বিবিসিকে জানায়, নিহত ওই নারীর বয়স ছিলো ৪০ এর কোঠায়। নিজের বাড়ি থেকে তাকে বের করে পাশের বাড়ির একটি শয়নকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই বাড়ির বাসিন্দারা যুদ্ধ শুরুর পরপরই ওই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।বিবিসির প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, সুসজ্জিত শয়নকক্ষটি এখন একটি জঘন্য অপরাধস্থল। তোষক ও লেপের ওপর দীর্ঘ রক্তের ধারার শুকনো দাগ।

ঘরের এক কোণে একটি আয়নায় লিপস্টিক দিয়ে একটি বার্তা লেখা – “অচেনা লোকেরা ধর্ষণ করেছে, কবর দিয়েছে রুশ সেনারা”।

ওকসানা নামের এক প্রতিবেশি বিবিসিকে জানান, রুশ সেনারা ওই নারীর দেহ উদ্ধার করে এবং তাকে সমাহিত করে।“তারা (রুশ সেনারা) আমাকে জানায় যে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিলো এবং তার কণ্ঠনালী চিড়ে ফেলা বা কোপানো হয়েছে। রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। তারা আরও জানায়, সেখানে অনেক রক্ত ছিলো।”সেই বাড়ির বাগানে ওই নারীকে সমাহিত করা হয়।বিবিসি ঘটনাস্থল ঘুরে আসার পরদিন ঘটনার তদন্তের জন্য ওই নারীর মরদেহ তোলা হয়। দেখা যায়, মৃতের গলা কাটা হয়েছে গভীর ও দীর্ঘ ভাবে।

কিইভ অঞ্চলের পুলিশ প্রধান আন্দ্রি নেবিতোভ বিবিসিকে আরকেটি ঘটনার কথা জানালেন যেটা নিয়ে তারা তদন্ত করছেন। কিইভের পশ্চিমে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে ঘটেছে ঘটনাটি।গ্রামের প্রান্তের একটি বাড়িতে তিন সদস্যের একটি পরিবারের বসবাস ছিলো, যেখানে বাবা-মায়ের বয়স ত্রিশের কোঠায় আর ছিলো তাদের ছোট একটি সন্তান।

নেবিতোভ বলেন, “গত ৯ মার্চ, রুশ বাহিনীর কয়েকজন সেনা ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। স্বামীটি তার স্ত্রী ও সন্তানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তাই তারা স্বামীকে উঠানে নিয়ে গুলি করে। এরপর দুই সেনা তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তারা ফিরে যায় আবার ফিরে আসে। এভাবে তিন দফায় সেনারা ওই নারীকে ধর্ষণ করে।“সেনারা হুমকি দিয়েছিলো যে, ধর্ষণের সময় যদি ওই নারী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে তার সন্তানের ক্ষতি হবে।”সেনারা চলে যাওয়ার সময় বাড়িটি আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং ওই পরিবারের কুকুরটিকে গুলি করে মেরে ফেলে রেখে যায়। ওই নারী তার সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

নেবিতোভের দল ঘটনাটির তদন্তে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে। ওই নারীর স্বামীকে তাদের প্রতিবেশিরা বাগানে সমাহিত করে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তার মরদেহ উত্তোলন করেছে। মামলাটি আন্তর্জাতিক আদালতে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।ইউক্রেইনের মানবাধিকার পর্যবেক্ষক লুদমিলা দেনিসোভা জানান, এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছেন তারা।তিনি বলেন, “বুচা দখল করে রাখার সময় সেখানকার একটি বাড়ির বেজমেন্টে ১৪ থেকে ২৪ বছরের প্রায় ২৫ জন কিশোরী ও তরুণীকে পদ্ধতিগতভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের নয়জন এখন গর্ভবতী। রুশ সেনারা তাদের বলেছে, তারা ধর্ষণ করে তাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবে যে তারা আর কোনো পুরুষের সংস্পর্শে যেতে চাইবে না।”দেনিসোভা জানান, ফোন ও টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা এ ধরনের আরও ঘটনার তথ্য ও খবর পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেইন চায় জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যেখানে ধর্ষণসহ যুদ্ধাপরাধের বিভিন্ন অভিযোগে ব্যক্তিগতভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিচার করা হবে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য