Thursday, December 26, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদবিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অন্ধকারে কোটি কিউবান

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অন্ধকারে কোটি কিউবান

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৯ অক্টোবর: প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিউবাজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে; তাতে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে দেশটির এক কোটি মানুষ।শুক্রবার স্থানীয় সময় ১১টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বলে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে।বিদ্যুৎ সঞ্চালন কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ ফিরতে কত সময় লাগতে পারে তা তারা জানেন না।বিবিসি লিখেছে, দ্বীপ রাষ্ট্রটি কয়েক মাস ধরেই ‘ব্ল্যাকআউট’ পরিস্থিতিতে পড়ছে; বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী ‘জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন।

দেশটির মাতানজাসে অবস্থিত আন্তোনিও গুতেরেস বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর শুক্রবারের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটে।প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল বারমুদেজ বলেছেন, এই পরিস্থিতি তার কাছে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ পাচ্ছে।তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “বিদ্যুৎ না ফেরা পর্যন্ত কোনও বিরাম নেই।”পরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের প্রধান লাজারা গুয়েরাকে উদ্ধৃত করে একটি বার্তা সংস্থা জানায়, বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের কিছু স্তর’ রয়েছে, যা দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুতে ব্যবহার করা হবে।

এর আগে শুক্রবার সরকারি কর্মকর্তারা নাইটক্লাব, সব স্কুল ও অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম সোমবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিপর্যয়ের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল এবং অগুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিষেবাগুলো স্থগিত করা হয়েছিল। ব্যস্ত সময়ে ফ্রিজ ও ওভেনের মতো উচ্চমাত্রার যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখারও আহ্বান জানানো হয়।মধ্য হাভানার বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী পেনশনভোগী এলয় ফন বলেন, “এটা পাগলামি। আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর, তা দেখাই যাচ্ছে… আমাদের রিজার্ভ নেই, দেশকে টিকিয়ে রাখার মতো কিছুই নেই, আমাদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা।”

ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর বারবারা লোপেজ (৪৭) বলেন, তিনি এরই মধ্যে ‘দুই দিন ধরে কাজ করতে পারছেন না’।তিনি বলেন, “গত ৪৭ বছরের মধ্যে এটা আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।”তারা এখন জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি করছে… আমাদের কাছে বিদ্যুৎ বা মোবাইল ডেটা নেই।”প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল মারেরো ক্রুজ বৃহস্পতিবার জনগণের উদ্দেশে টেলিভিশনে এক বার্তা দেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিদ্যুৎ অবকাঠামোর অবনতি, জ্বালানি ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে দায়ী করেন।তার কথায়, “জ্বালানি সংকটই সবচেয়ে বড় কারণ।”ন্যাশনাল ইলেকট্রিক ইউনিয়নের (ইউএনই) প্রধান আলফ্রেডো লোপেজ ভালদেস স্বীকার করেছেন, দ্বীপ রাষ্ট্রটি বিদ্যুৎ নিয়ে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে, যার জন্য জ্বালানি ঘাটতি মূলত দায়ী।

বিবিসি লিখেছে, দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউট কিউবার জন্য সর্বদাই অস্থির সময় ধরা হয়। কারণ আলো জ্বালিয়ে রাখার ক্ষমতাকে কিউবান সরকারের জনশৃঙ্খলা ধরে রাখার সক্ষমতা হিসেবে বিবেচিত।২০২১ সালের জুলাই মাসে কয়েক দিনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে দেশটির বেশিরভাগ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।তখন ফ্রিজের মূল্যবান খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দিনের পর দিন এসি বা সিলিং ফ্যান ছাড়া চলতে হওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দেয়।বিবিসি লিখেছে, অনেক ভবনে বৈদ্যুতিক পাম্প ট্যাপে পানি নিয়ে আসে, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি নেই।

আর পাম্পগুলোতে পেট্রোল না থাকার অর্থ হল মানুষ মৌলিক সমস্যা সমাধানে বা জরুরি প্রয়োজনের জন্য তাদের গাড়ি ব্যবহার করতে পারে না।রোজকার নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রশ্নে নাগরিকদের যে ভয় কেটে যাচ্ছে তা কিউবা সরকার ক্রমশই বুঝতে পারছে।পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কেউ কেউ রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতেও প্রস্তুত।গত মার্চে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সান্তিয়াগোতে শত শত মানুষ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও খাদ্য সংকটের প্রতিবাদে বিরল এক গণবিক্ষোভ করে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য