স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৭ অক্টোবর: গাজা যুদ্ধের সূচনা ঘটানো ৭ অক্টোবর হামলার বর্ষপূর্তির আগে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজা ও উত্তরের প্রতিবেশী লেবাননে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজা থেকে সীমান্ত পার হয়ে দক্ষিণ ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এ হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে ভাষ্য ইসরায়েলের। হামলা চলাকালে ইসরায়েল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।হামাসের এ আক্রমণের জবাবে ভয়াবহ বোমা হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গত এক বছর ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় গাজায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত আর আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা প্রায় ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অট্টালিকা ও এখনও দাড়িয়ে আছে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত এমন ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ চার কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি হবে। এসব ধ্বংসাবশেষ ২০০৮ থেকে গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজা ভূখণ্ডে সঞ্চিত আবর্জনার ১৪ গুণ এবং ২০১৬-১৭ সালে ইরাকের মসুলে হওয়া যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষের পাঁচ গুণেরও বেশি।সোমবার গাজা যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগের রাতে ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাংশে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। গত মাসে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা বাড়ানোর পর থেকে ইসরায়েল এদিন রাতেই সবচেয়ে তীব্র হামলা চালিয়েছে। বোমা বর্ষণের পর বিশাল অগ্নিগোলায় রাতের আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে আর তীব্র শব্দে পুরো বৈরুত কেঁপে ওঠে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের জঙ্গি বিমানগুলো বৈরুতে হিজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদরদপ্তরের অধীনে থাকা লক্ষ্যস্থল ও অস্ত্র গুদামগুলোতে আঘাত হেনেছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ও বেকা উপত্যকায়ও হিজবুল্লাহর লক্ষ্যস্থলগুলোতে আঘাত হানা হয়েছে।বৈরুতের দক্ষিণাংশের বাসিন্দা হানান আব্দুল্লাহ রয়টার্সকে বলেছেন, “আগের যেকোনো রাতের চেয়ে গত রাতের হামলা সবচেয়ে হিংস্র ছিল। বহুবার হামলা চালানো হয়েছে, আমরা সেগুলো গুনতেও পারিনি। কানে তালা লাগানোর মতো সব শব্দ ছিল।”লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লেবাননের মধ্যাঞ্চলীয় পার্বত্য শহর কায়ফাউনে এক ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ছয়জন নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন। নিকটবর্তী শহর কমতিয়ে আরেক হামলায় আরও ছয়জন নিহত ও তিনটি শিশুসহ ১১ জন আহত হয়েছেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, রোববার ভূখণ্ডটির একটি মসজিদে ও বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৯৩ জন আহত হয়েছেন।হিজবুল্লাহর ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্মকর্তা মাহমুদ কামতি ইরাকের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে রোববার বলেছেন, বৈরুতের দক্ষিণাংশে ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণের কারণে সেখানে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালানো যাচ্ছে না।তিনি জানান, একজন নেতা মনোনীত না হওয়া পর্যন্ত হিজবুল্লাহ একটি যৌথ কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হবে।
ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর তার উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হাশেম সাফিয়েদ্দিনও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।গত বৃহস্পতিবার রাতে বৈরুতের দাহিয়া এলাকায় চালানো ওই হামলার পর থেকে ইরানের আল কুদস বাহিনীর কমান্ডার ইসমাইল কানিনিরও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে ইরানের দুই ঊধ্র্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান রোববার অভিযোগ করে বলেছেন, লেবাননে বিমান হামলা চালানোর সময় ইসরায়েল বেসামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনে ও বেসামরিকদের হত্যা করে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে এমন ‘বহু উদাহরণ’ আছে।