স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৬ জুলাই: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম টেলিভিশন বিতর্কে ভরাডুবির পর দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার মুখে থাকলেও ভোটের মাঠ ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন।এবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, একমাত্র ইশ্বরই যদি বলে, তাহলেই তিনি সরে দাঁড়াবেন, তা না হলে নয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও তিনি বলেন, “আমি কোথাও যাচ্ছি না।”গত ২৭ জুন প্রতিদ্বন্দ্বি রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিএনএন টেলিভিশনের বিতর্কে নড়বড়ে পারফরম্যান্সের পর বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দস্যরাও চাইছেন, যেন তিনি আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।ডেমোক্র্যাট সমর্থক ভোটাররাও এখন উদ্বিগ্ন। কারণ, আগামী সাড়ে চার বছর বাইডেন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে ভোটারদের মনে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার এবিসি নিউজকে সাক্ষাৎকার দেন বাইডেন।প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন মেয়াদে কাজ করতে পারবেন কিনা এবং বয়স ও কাজ করার সক্ষমতাকে অস্বীকার করতে চান কিনা, সাক্ষাৎকারের প্রায় পুরোটা সময়ই বাইডেনের তা নিয়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন উপস্থাপক জর্জ স্টেফানোপোলাস।জবাবে গত সপ্তাহে টেলিভিশন বিতর্কে নিজের নড়বড়ে পারফরম্যান্সের জন্য ক্লান্তি ও ‘প্রচণ্ড ঠাণ্ডাকে’ দায়ী করে বাইডেন বলেন, “আমি মনে করি না প্রেসিডেন্ট হওয়ার বা এই দৌড়ে জয়ী হওয়ার জন্য আমার চেয়ে বেশি যোগ্য আর কেউ আছে।”
২২ মিনিটের সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, “যদি সর্বশক্তিমান নেমে এসে বলেন, ‘জো, এই দৌড় থেকে সরে যাও’, তাহলেই আমি সরব।”তবে প্রেসিডেন্ট গত সপ্তাহে বিতর্কের মঞ্চের চেয়ে এবিসির সাক্ষাৎকারে বেশি স্পষ্ট এবং দৃঢ়ভাবে কথা বলেছেন বাইডেন, যদিও তার কণ্ঠস্বর দুর্বল এবং মাঝে মাঝে কর্কশ শোনাচ্ছিল।ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্ক বিপর্যয়ের পর বাইডেন যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, সেই প্রেক্ষাপটে এবিসির সাক্ষাৎকারটিকে ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের জন্য ‘বড় পরীক্ষা’ বলে মনে করছেন অনেকেই।দলের মধ্যেও সমালোচিত হচ্ছেন বাইডেন।
গতকাল শুক্রবার নিজের শহর উইসকনসিনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভোটারদের একটি মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাইডেন।সমাবেশ মঞ্চে ওঠার সময় যখন বাইডেন একজন সমর্থক “মশাল হস্তান্তর করুন, জো’ লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক সমর্থক একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, “আপনার উত্তরাধিকার রক্ষা করুন, সরে যান!”সমাবেশে বাইডেন বলেন, “আমি এমন সব গল্প শুনেছি, যেখানে বলা হচ্ছে আমি অনেক বুড়ো হয়ে গেছি।”
তিনি পালটা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “আমি কি দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরির জন্য খুব বৃদ্ধ ছিলাম? আমি কি ৫০ লাখ আমেরিকানের শিক্ষাঋণ শেষ করতে খুব বৃদ্ধ ছিলাম?”“ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য আমার বয়স খুব বেশি- এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত জনতা ‘না’ সূচক জবাব দেন।ট্রাম্পের ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং অন্যান্য মামলার কথা উল্লেখ করে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ‘ওয়ান ম্যান ক্রাইম ওয়েভ’ বলে অভিহিত করেন।
এদিকে বিতর্কে ভরাডুবির পর আগ্রাসী নির্বাচনি প্রচারে নামার পরিকল্পনা করছেন বাইডেন। স্ত্রী জিল বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস চলতি মাসে লড়াইয়ের মূল ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত রাজ্যগুলো সফর করবেন।রোববার পেনসিলভেনিয়ায় আরেকটি সমাবেশে বাইডেনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।বাইডেন তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদও জানিয়েছেন।বাইডেন ভোটের মাঠ থেকে সরে গেলে কমলা হ্যারিসের ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।