স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ৩ জুলাই: দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে হারিকেন বেরিল এখন প্রচণ্ড গতিতে জ্যামাইকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যাত্রাপথে শক্তি সামান্য ক্ষয় হলেও সেটি এখনো ‘অতি বিপজ্জনক’ ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড় রূপ নিয়ে আছে।যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) থেকে বলা হয়েছে, হারিকেন বেরিল তীব্র গতির ঝোড়ো বাতাস নিয়ে আজ বুধবার জ্যামাইকায় আছড়ে পড়তে পারে। এদিন রাতে বা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ক্লেম্যান দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হানতে পারে এটি। উভয় স্থানে হারিকেন সতর্কতা জারি রয়েছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস বলেছেন, ‘আমি জ্যামাইকার সব বাসিন্দাকে খাবার, ব্যাটারি, মোমবাতি ও পানি মজুত করার আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে রাখুন। আপনার বাড়িকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন কিছু সরিয়ে ফেলুন।’
চলতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম শুরুর আগেই হারিকেন সৃষ্টি এবং দ্রুত শক্তি সঞ্চার করে তা ক্যাটাগরি-৪-এ রূপ নিয়ে ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।জ্যামাইকায় আঘাত হানার আগে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বেরিল হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানানো হয়। হাইতির রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সসহ দেশটির দক্ষিণ উপকূলে ওই দিন বিকেল থেকেই বেরিলের প্রভাব শুরু হয়। হারিকেনের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে।বেরিলের প্রভাবে হাইতির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বৃষ্টি ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এনএইচসি। হাইতির নতুন প্রধানমন্ত্রী গ্যারি কনিলে দেশবাসীকে সজাগ থাকার ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
চলতি বছর মৌসুমের আগেই হারিকেন সৃষ্টি হওয়া এবং দ্রুত শক্তি সঞ্চার করে সেটি ভূখণ্ডের দিকে ধেয়ে আসার কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।আমি জ্যামাইকার বাসিন্দাদের খাবার, ব্যাটারি, মোমবাতি ও পানি মজুত করার আহ্বান জানাচ্ছি। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিরাপদে রাখুন।এ বছর আটলান্টিক অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া প্রথম হারিকেন বেরিল। সাফির-সিম্পসন স্কেলের রেকর্ড অনুযায়ী, এ অঞ্চলে আগাম সৃষ্টি হওয়া ঝড়ের মধ্যে বেরিলই হারিকেনের সর্বোচ্চ ক্যাটাগরিতে পৌঁছেছে।এদিকে গত সোমবার বেরিলের তাণ্ডবে দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোয় অন্তত পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন। বেরিলের প্রভাবে এ অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে এবং অনেক স্থান বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রানাডাইনে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রালফ গঞ্জালভস বলেছেন, ‘হারিকেন এসে অপরিমেয় ধ্বংসের চিহ্ন রেখে গেছে। গ্রানাডাইনের ইউনিয়ন দ্বীপের ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।’ সেখানে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তিনি। বলেছেন, নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে।তিনটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশ গ্রানাডার দুটি দ্বীপ বেরিলের আঘাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডিকন মিচেল। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘অবস্থা শোচনীয়। বিদ্যুৎ নেই। প্রায় সব বাড়ি ও ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।’ তিনি এ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। পরে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।এদিকে হারিকেনের প্রভাবে ভেনেজুয়েলায় একজন মারা গেছেন বলে জানা গেছে।