Thursday, October 10, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদবলিভিয়ায় ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা

বলিভিয়ায় ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৭ জুন: বলিভিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর এক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এ ঘটনায় সামরিক বাহিনীর এক জেনারেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে ‘অভ্যুত্থান’ প্রচেষ্টার নিন্দা করে আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন।রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার জেনারেল হুয়ান হোসে সুনিগার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর কয়েকটি ইউনিট রাজধানী লা পাসের কেন্দ্রীয় চত্বর প্লাসা মুরিয়োতে জড়ো হয়, এই স্কয়ারটিতেই দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও কংগ্রেস এর অবস্থান।

রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দেখেছেন, একটি সাঁজোয়া যান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের একটি প্রবেশ পথ ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলেছে আর সৈন্যরা ভেতরে প্রবেশ করছে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে সশস্ত্র বাহিনী প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে চলে যায়।সশস্ত্র সেনারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে থাকা অবস্থায় আর্সে বলেন, “আজ দেশ একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সম্মুখীন। আজ দেশটি আবারও গণতন্ত্রকে ছোট করার স্বার্থের মুখোমুখি হয়েছে।“আজ বলিভিয়ার জনগণকে ডাক দেওয়া হচ্ছে। বলিভিয়ার জনগণের সংগঠিত হওয়া ও গণতন্ত্রের সমর্থনে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসা দরকার।”এর কয়েক ঘণ্টা পর রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দেখেন, সেনারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় চত্বর ছেড়ে যাচ্ছে, এরপর পুলিশ ওই প্লাজাটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

বলিভিয়ার কর্তৃপক্ষ জুনিগাকে গ্রেপ্তার করে সরিয়ে নিয়েছে। তবে তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার হয়নি। সম্প্রতি জুনিগাকে সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের পদ থেকে সরানো হয়েছিল।প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতরে আর্সে হোসে উইলসন সানচেজকে সামরিক বাহিনীর নতুন কমান্ডার হিসেবে শপথ পরান; এটি সুনিগার সাবেক পদ। সামরিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করে সানচেজ শান্ত থাকার ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।

এক ঘোষণায় তিনি বলেন, “আমি রাস্তায় নেমে আসা সব সেনাদের তাদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিচ্ছি। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাদের সেনাদের রক্ত যেন না ঝড়ে।”বলিভিয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পযবেক্ষণ করছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘শান্ত ও সংযত’ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

২০২৫ সালের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বলিভিয়ায় উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে। দেশটির সাবেক বামপন্থি প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেস সাবেক রাজনৈতিক মিত্র আর্সের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন, এতে ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক দলের মধ্যে বড় ধরনের ফাটল তৈরি হয়েছে এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিস্তৃত হয়েছে।রয়টার্স বলছে, ২০০৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশটি শাসন করা মোরালেস ক্ষমতায় ফিরে আসুক অনেকেই এমনটি চান না। ২০১৯ সালে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা হারান মোরালেস আর তার জায়গায় একটি অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে।

 এরপর ২০২০ এর সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আর্সে প্রেসিডেন্ট হন।কিছুদিন আগে সামরিক বাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় সুনিগা বলেছিলেন, মোরালেসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে আসতে দেওয়া উচিত হবে না আর তিনি এরকম কোনো চেষ্টা করলে তাকে বাধা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।সুনিগার এ মন্তব্যের পরই তাকে সামরিক বাহিনীর কমান্ডারের পদ থেকে সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট আর্সে।প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলার আগে সুনিগা প্লাসা মুরিয়োতে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং দেশজুড়ে ক্ষোভ উস্কে উঠছে বলে দাবি করেন।

বলিভিয়া অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাওয়া সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং গ্যাস রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির মুদ্রারও অবনমন ঘটেছে।স্থানীয় একটি টেলিভিশন স্টেশনকে সুনিগা বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান আমাদের হতাশ প্রকাশ করতে এসেছেন।সামরিক বাহিনীর পূর্ণ উর্দি পরা অবস্থায় সৈন্য পরিবেষ্টিত সুনিগা একটি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ডাক দিয়ে বলেন, “আমাদের দেশকে ধ্বংস করা, দরিদ্র বানানো বন্ধ করুন, আমাদের সেনাবাহিনীর মানহানি বন্ধ করুন।”তিনি যা করছেন জনগণের সমর্থন নিয়েই করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

পরে বুধবার সুনিগা সাংবাদিকদের বলেন, আর্সে তার জনসমর্থন বাড়ানোর জন্য রোববার তাকে ‘উত্তেজনা তৈরি করতে’ বলেছিলেন। তবে নিজের এই বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।অভ্যুত্থান ব্যর্থ ও সুনিগাকে গ্রেপ্তারের পর বলিভিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদুয়ার্দো দেল কাস্তিয়ো বলেন, সুনিগা জনসমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছিল আর তার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় নয়জন আহত হয়েছেন, যা প্রমাণ করছে ‘এটি কোনো অনুশীলন ছিল না।সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেস বলেছেন, “সশস্ত্র বাহিনীকে গণতন্ত্র লঙ্ঘন ও জনগণকে ভয় দেখাতে দেবো না আমরা।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য