Wednesday, March 19, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদদুবাইয়ে এমন বন্যার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি না অন্য কিছু  

দুবাইয়ে এমন বন্যার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি না অন্য কিছু  

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৮ এপ্রিল: স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে। বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২৪ ঘণ্টার অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এমন রেকর্ড বন্যার পর কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত কতটা অস্বাভাবিক ছিল এবং এ ধরনের ভারী বর্ষণের কারণ কী ছিল, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

কতটা ভারী বর্ষণ হয়েছিল

আমিরাতের উপকূলীয় শহর দুবাই। এটি সচরাচর রুক্ষ এলাকা হিসেবে পরিচিত। যদিও এখানে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, তবে মাঝেমধ্যেই ভারী বর্ষণও হয়ে থাকে।দুবাই থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল-আইন শহরে ২৪ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।উপসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন নিয়ে পড়াশোনা করে আসছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের আবহাওয়াবিদ মার্টিন আম্বাউম। এই ভারী বর্ষণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বিশ্বের এই অংশটি সাধারণত দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন থাকে। তবে অনিয়মিত, ভারী বৃষ্টি হয়ে থাকে। এরপরও এটা ছিল সবচেয়ে বিরল বৃষ্টিপাতের ঘটনা।’

জলবায়ু পরিবর্তন কী ভূমিকা রেখেছিল

এই বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা ভূমিকা রেখেছিল, এখনই তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিষয়গুলোর পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।তবে যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তার সঙ্গে এই রেকর্ড বৃষ্টিপাতের সম্পর্ক আছে। সাধারণত তুলনামূলক বেশি উষ্ণ বাতাস অধিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিরিক্ত প্রায় ৭ শতাংশ আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে, যা বৃষ্টির তীব্রতা বাড়াতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের জলবায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালেন বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের তীব্রতা নতুন রেকর্ড গড়েছে। কিন্তু জলবায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে। ঝড় সৃষ্টিতে এবং ভারী বৃষ্টি ঝরাতে আর্দ্রতার পরিমাণ যত বাড়বে, এর সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হবে।’সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন অব্যাহত থাকায় চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ আমিরাতের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়বে।

ক্লাউড সিডিং বা কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর ভূমিকা ছিল কি

প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ইতিহাস আছে আমিরাতের। উড়োজাহাজ বা ড্রোন দিয়ে সিলভার আয়োডাইডের মতো ক্ষুদ্রকণা নিক্ষেপ করে মেঘে আর্দ্রতাকে ঘনীভূত করার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো হয়।কয়েক দশক ধরে এ কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে। পানির সংকট মোকাবিলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমিরাতও এই কৌশল কাজে লাগিয়েছে।বন্যা শুরু হওয়ার পরপরই কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী তাৎক্ষণিক এই চরম আবহাওয়ার জন্য দেশটিতে চালানো সাম্প্রতিক ক্লাউড সিডিং অভিযানকে ভুলভাবে দায়ী করতে শুরু করেন।এর আগে একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানোর জন্য রোববার ও সোমবার উড়োজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার মোতায়েন করা হয়নি, যেদিন বন্যা দেখা দিয়েছিল।

অবশ্য কোন সময় কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ঘটনাটি ঘটেছে, তা আলাদাভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঝড়ের ক্ষেত্রে এটার সামান্য প্রভাব থাকতে পারে। কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোরবিষয়টি সামনে আনাটা ‘বিভ্রান্তিকর’।ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডেরিক ওটো বলেন, ‘এমনকি যদি দুবাইয়ে বৃষ্টি ঝরাতে ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েও থাকে, তবে আগে থেকেই মেঘ সৃষ্টির জন্য পানি বহন করার মতো পরিবেশ সেখানে বিরাজমান ছিল।’

সাধারণত বৃষ্টি ঝরাতে বাতাস, আর্দ্রতা ও ধূলিকণার পরিমাণ অপর্যাপ্ত হলে ক্লাউড সিডিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত সপ্তাহেই উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের বন্যার ঝুঁকির বিষয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সতর্ক করা হয়েছিল।বিবিসির আবহাওয়াবিদ ম্যাট টেইলর বলেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার আগে কম্পিউটার মডেল ২৪ ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টিপাতের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল।ম্যাট টেইলর বলেন, ‘আমি যদি শুধু ক্লাউড সিডিং থেকে প্রত্যাশা করেও থাকি, এর প্রভাব তার চেয়েও অনেক বিস্তৃত ছিল—বাহরাইন থেকে ওমান পর্যন্ত বিশাল এলাকায় মারাত্মক বন্যা দেখা দেয়।’

ভারী বৃষ্টি থেকে আকস্মিক বন্যা: দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা

উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও ওমান ভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। এ কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম ইউএইর দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা খুবই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি। শহরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এ কারণে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রীকে এই এলাকায় (বিমানবন্দর) না আসার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে। দুবাইয়ের উত্তর দিকে বন্যায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এই ব্যক্তির গাড়ি আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছিল বলে জানা যায়।অন্য দেশ ওমানের সাহাম এলাকায় একটি মেয়ের লাশ খুঁজে পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। এ নিয়ে বন্যায় গত রোববার থেকে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জন।ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইট অ্যাওয়্যারের গতকাল বুধবার রাত ৯টার তথ্য অনুসারে, গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ২৯০টি ফ্লাইটের ওঠানামা বাতিল করা হয়।

বিশ্বের প্রতিটি মহাদেশে ফ্লাইট সংযোগের একটি প্রধান কেন্দ্র দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।ফ্লাইট অ্যাওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৪০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।গত বছর ৮ কোটির বেশি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দর গত বছর সবচেয়ে বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়েছে।দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে কিছুটা সময় লাগবে।দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ হালনাগাদ পরামর্শে বলেছে, এয়ারলাইনস সংস্থাগুলো নিশ্চিত করে না বললে যাত্রীরা যেন টার্মিনাল ১-এ না আসেন। তারা যাত্রীদের বিমানবন্দরে যাতায়াত এড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছে।দুবাইভিত্তিক আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ সংস্থা এমিরেটস আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই শহর থেকে তাদের ফ্লাইটের যাত্রীদের ‘চেক-ইন’ স্থগিত করেছে।

দেশটির আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ আরও বজ্রপাত, ভারী বৃষ্টি ও শক্তিশালী বাতাসের পূর্বাভাস দিয়েছে। সেখানকার অনেক নিচু এলাকা এখনো পানির নিচে রয়েছে।ওমানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত মঙ্গলবার রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে। গত ৭৫ বছর তারা বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আসছে।দেশটির জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র বলেছে, ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে আল-আইন অঞ্চলের খাতম আল-শাকলায় ২৫৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।দেশটিতে বছরে গড়ে ১৪০ থেকে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর দুবাইয়ে সাধারণত মাত্র ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এপ্রিলের মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৮ মিলিমিটার।দুবাইয়ের কেন্দ্রস্থলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শেখ জায়েদ রোডের প্লাবিত অংশে বেশ কিছু যানবাহন ডুবে আছে। একই সঙ্গে ১২ লেনের মহাসড়কটির কোথাও দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য