জাকির হোসেন ঢাকা ২৬ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশের রাজশাহীতে আয়োজিত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের জনগণ ও সরকার নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছে, আত্মত্যাগ করেছে। তাদের এ আত্মত্যাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাজশাহীতে পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা উপলক্ষে ভারতীয় অতিথিদের দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় এর আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে দুদেশের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারত-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও যেন গভীর হয়, সেক্ষেত্রে এ ধরনের মিলনমেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম সেই আওয়াজ এখনও আমাদের কানে বাজে। সেই আওয়াজে আমরা ভারতবাসী সাড়া দিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরাসহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় দেয় ভারত। দুদেশের সম্পর্ক এখনও অটুট আছে। রামপ্রসাদ পাল বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আজ অবধি দুদেশের সম্পর্ক অটুট রয়েছে। তিনি বলেন, সব সময় ভারত বাংলাদেশের পাশে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশের জন্য ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের উদার ভালোবাসা রয়েছে। শনিবার সকালে বাংলাদেশের রাজশাহী মহানগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রামপ্রসাদ পাল এসব কথা বলেন। ভারত-বাংলাদেশ পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় যোগ দিতে গত শুক্রবার বিকেলে তিনি রাজশাহী পৌঁছেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলার আয়োজন করতে পেরে রাজশাহীবাসী আনন্দিত ও গৌরবান্বিত। এ সুযোগে সমবেত সবার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। সেই সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে। এ সাংস্কৃতিক মিলনমেলার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক অটুট ও আরও সুদৃঢ় হবে। দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক অবনতি ঘটাতে নানা সময় ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। বাংলাদেশ-ভারত একে অপরের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করে চলেছে।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দুরাইস্বামী বলেন, এ সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন দুদেশের সম্পর্কে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে সংস্কৃতির বিনিময় অব্যাহত থাকবেই। স্বাগত বক্তব্য দেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (কো-অর্ডিনেটিং চ্যাপ্টার) প্রধান সমন্বয়ক এস এম সামছুল আরেফীন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এ সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উভয় দেশে আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে পঞ্চম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। এ মেলার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক আরও সমন্নুত হবে। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সংসদ সদস্য, ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংস্কৃতিক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষক, বিভাগের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।