স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ১৫ ফেব্রুয়ারি : ইউক্রেইন সংকট যে দামামা বাজিয়ে দিয়েছিল, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চলা অচলাবস্থা অবসানে আরও আলোচনার কথা বলায় এবং যুদ্ধ এড়াতে কিয়েভের কর্মকর্তাদের ছাড়ের ইঙ্গিত মেলায় সেই সঙ্কটের সুরে খানিকটা পরিবর্তন এসেছে।
রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজগুলো কৃষ্ণ সাগরের ইউক্রেইন উপকূলে জড়ো হলেও এবং রাশিয়ার স্থল বাহিনীগুলো আঘাত হানতে প্রস্তুত, এমনটি দেখা গেলেও সোমবার পরিস্থিতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপ শুরু করার পরিবর্তে ক্রেমলিন পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা চায় বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘সামনে এখনও একটি কূটনৈতিক পথ আছে’, এমনটি বলেছেন। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সারজেই শোইগু পুতিনকে বলেছেন, ইউক্রেইনের আশপাশে ‘বড় ধরনের মহড়া’ শেষ হয়ে আসছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার আলোচনার প্রসঙ্গে ল্যাভরভ বলেন, “আমার বিশ্বাস আমাদের সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমি সেগুলো চালিয়ে নেওয়ার ও তা আরও জোরদার করার প্রস্তাব করছি।”পুতিন অস্পষ্টভাবে বলেন, “ভালো।”সামরিক পদক্ষেপ ছাড়াই সেনা সমাবেশকে ব্যবহার করে মূল উদ্দেশ্যগুলো অর্জন করতে পারবে, ক্রেমলিন এখনও সে সম্ভাবনার কথাই ভাবছে; এটি তারই ইঙ্গিত বলে মন্তব্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের।ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভেও এমন সুর বদলের সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছিল। সেখানে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশের নেটো জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন। তিনি এমন পদক্ষেপের দিকে এগোলে তা পুতিনের অন্যতম প্রধান দাবি পূরণে সহায়তা করবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, নেটোর সদস্যপদ ‘আমাদের নিরাপত্তার জন্যই’, এই সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য দেশের সংবিধানেই লেখা রয়েছে।কিন্তু রাশিয়ার বাহিনীগুলোর দ্বারা প্রায় চারদিক থেকে ঘেরাও হয়ে এবং রাশিয়া আগ্রাসন চালালে যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্ররা ইউক্রেইনে সেনা পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেওয়ায় দেশটি যে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে তা স্বীকার করে নেটো সদস্যপদের বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, “এই পথে ইউক্রেইন আর কতোদূর যাবে? কে আমাদের সমর্থন করবে?”তিনি জানান, ইউক্রেইনের নেটো জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা ‘একটি স্বপ্নের মতো’ বলে তিনি মনে করেন।
কিয়েভ সফরে আসা জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজকে পাশে নিয়ে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি। যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে কিয়েভে এসেছেন শোলজ। সংকট নিয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে মঙ্গলবার মস্কো যাবেন তিনি।শোলজ বলেছেন, রাশিয়া ফের ইউক্রেইনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা লঙ্ঘন করলে তারা মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে সমন্বিত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ইতোমধ্যে তেলের দাম বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতেই ইউরোপের নেতারা সংকট এড়াতে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। একই উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ক্রেমলিন সফরে গিয়েছিলেন।
ইউরোপে রাশিয়ার সবচেয়ে সরব সমালোচক দেশ পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসবিগিনিয়েভ রাউ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মঙ্গলবার মস্কো যাচ্ছেন। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি ডি মাইয়ো মঙ্গলবার কিয়েভে যাবেন আর বুধবার সেখান থেকে মস্কো যাবেন। সংকট চলমান থাকায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের কিয়েভ দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়ে পশ্চিম ইউক্রেইনের পোল্যান্ড সীমান্তের নিকটবর্তী লভিভে সরিয়ে নিয়েছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।