Monday, February 17, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদসীমান্তে চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে নেপালের ‘অভিযোগ’

সীমান্তে চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে নেপালের ‘অভিযোগ’

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৮ ফেব্রুয়ারি। নেপাল সরকারের ফাঁস হওয়া একটি প্রতিবেদনে সে দেশের পশ্চিম সীমান্তে নেপালি ভূখণ্ডে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে।ওই প্রতিবেদন দেখার কথা জানিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রথম কাঠমান্ডুর পক্ষ থেকে চীনের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানানো হল। 

নেপাল সরকার ওই প্রতিবেদন তৈরি করে গত সেপ্টেম্বরে। সেখানে দাবি করা হয়, নেপালের দূর পশ্চিম প্রান্তের জেলা হুমলায় তাদের ভূখণ্ডে হস্তক্ষেপ করছে চীনারা।বিবিসি লিখেছে, ফাঁস হওয়া এই প্রতিবেদনের বিষয়ে নেপাল সরকারের বক্তব্য জানতে চাইলে কোনো জবাব পায়নি তারা। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাঠমান্ডুতে চীনের দূতাবাস।কাঠমান্ডুর ওই প্রতিবেদন কেন এখনও প্রকাশ করা হয়নি, তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য সম্প্রতি নেপাল সরকারের সঙ্গে বেইজিংয়ের দূরত্ব কমেছে। বিশেষ করে দক্ষিণের বড় প্রতিবেশী ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে উত্তরের বড় প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে কাঠমান্ডুর নীতি নির্ধারকরা।

তবে নেপাল সরকারের ওই প্রতিবেদনের তথ্য ঠিক হলে তা বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওই প্রক্রিয়ায় ছায়া ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।নেপাল ও চীনের মধ্যে এক হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, যার পুরোটাই হিমালয় পর্বতমালায়। ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল।এর বেশিরভাগ অংশই দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এবং দুই দেশের মধ্যে এক কিলোমিটার দূরত্ব রেখে বসানো পিলার দিয়ে চিহ্নিত করা। ফলে সীমান্ত ঠিক কোন অংশে তা নির্ণয় করা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে।চীনের সম্ভাব্য অনুপ্রেবেশের খবরে নেপাল সরকার হুমলা জেলায় একটি টাস্কফোর্স পাঠায়। খবর রটেছিল যে নেপালের সীমানার ভেতরে চীন স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

বিবিসি লিখেছে, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নেপালি টাস্কফোর্স ওই এলাকা পরিদর্শন করে এবং তারা দেখতে পায় নেপালের যে অংশে স্থাপনা নির্মাণের খবর রটেছিল সেটা ঠিক না, তবে ওই এলাকায় চীনের ভূখণ্ডে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যে স্থানীয় নেপালিরা সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায় না, কারণ তাদের অনেকেই সীমানার ওপারে চীনের বাজারে নিয়মিত যাতায়াত করেন এবং এর ওপর নির্ভরশীল।ফাঁস হওয়া টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপলক্ষে নেপালিদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করেছে। বিশেষ করে নেপালের লালুংজং এলাকা দিয়ে তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।নেপালের ওই অঞ্চলটি হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান কৈলাশ পর্বতের খুব কাছে। ওই অঞ্চলে নেপালি খামারিদের পশুচারণও চীনারা নিয়ন্ত্রিত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।অনুসন্ধান দলের সদস্যরা দেখতে পেয়েছেন, একই এলাকায় সীমান্ত পিলারের কাছে বেড়াও নির্মাণ করছে চীন। সেখানে তারা নেপালের অংশে খাল খনন ও সড়ক নির্মাণের চেষ্টা করছে।সীমান্তের ওই অংশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নেপালের নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং সীমান্তে এ ধরনের বিষয়গুলো সুরাহা করতে স্থগিত হয়ে থাকা ব্যবস্থাপনাগুলো চালুর সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

নেপালের জরিপ বিভাগের সাবেক প্রধান বুদ্ধি নারায়ণ শ্রেষ্ঠ বলেন, সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত দেশের সীমানা কতটুকু বিস্তৃত, যাতে তারা নেপালের ভূখণ্ড রক্ষা করতে পারে।

চীন যদিও অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে এটাও স্পষ্ট নয় ঠিক কী কারণে এ ধরনের ঘটনা তারা ঘটাতে পারে।

সাবেক নেপালি কূটনীতিক ভিজয় কান্ত কর্ণ বলেন,“ বেইজিং হয়ত ভারতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। মনে হচ্ছে তারা বাইরের শক্তির অনুপ্রবেশ নিয়ে আশঙ্কায় আছে। তাই তারা সীমান্ত পারাপার হওয়ার সুবিধা বন্ধ করতে চাইছে। নিজের দেশ থেকেও বাইরে বের হওয়ার পথ হয়ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে চীন।”নেপাল-চীন সীমান্তের ওই অংশেই তিব্বত। বেইজিংয়ের ‘দমন-পীড়ন’ এড়াতে তিব্বত থেকে অনেকে ওই পথ দিয়ে পালিয়ে নেপাল ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।বর্তমানে নেপালে প্রায় ২০ হাজার তিব্বতি শরণার্থীর বসবাস, অন্যরা ভারত ও অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ওই পালানোর পথ বন্ধ করার চেষ্টা করে আসছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত দুই বছর ধরে নেপালে চীনাদের অনুপ্রবেশের অভিযোগ অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে এবং এর প্রতিবাদে রাজধানী কাঠমান্ডুতে মাঝেমধ্যেই প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে। সবশেষ বিক্ষোভটি হয়েছে মাত্র দুই মাস আগে।এর প্রতিক্রিয়ায়, নেপালে চীনের দূতাবাস জানুয়ারিতে একটি বিবৃতিতে জানায়, “কোন ধরনের সংকট নেই। আশা করা হচ্ছে নেপালের জনগণ ব্যক্তি বিশেষের ভুয়া প্রতিবেদনে বিভ্রান্ত হবে না।”বিবিসি লিখেছে, তাদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে চীনা দূতাবাস ওই অপ্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নেপাল সরকার সীমান্তে অনুপ্রবেশের অভিযোগ বেইজিংকে জানিয়েছে। চীনের তরফ থেকে কী ধরনের জবাব দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য