স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ ফেব্রুয়ারি। এখনও একটি চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেইন-রাশিয়া পুরোদস্তুর যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, এই সংকট রাশিয়ার নিরাপত্তাকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আর রাশিয়ারও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরার এখতিয়ার আছে।
বিবিসি জানায়, সোমবার মস্কোয় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর।এই বৈঠকের আগে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর সুরক্ষা এবং একইসঙ্গে রাশিয়াকে তুষ্ট রাখার মধ্যে এক ‘নতুন ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি পুনরায় জোর দিয়ে এও বলেছেন, ইউক্রেইনের সার্বভৌমত্ব কারও সঙ্গে আলোচনার বিষয় নয়।২০১৪ সালে ইউক্রেইনের কৃষ্ণ সাগর তীরবর্তী উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এ নিয়ে প্রতিবেশী সুইডেন, লুথিনিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড এবং পশ্চিমা দেশগুলো আতঙ্কের মধ্যে আছে।
তাছাড়া, পূর্ব ইউক্রেইনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াইয়ে রাশিয়া বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেইন। তাদের অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও আছে। যা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ইউক্রেইন ও রাশিয়া মুখোমুখি অবস্থানে আছে।সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা সমাবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেইনে আগ্রাসন চালাতেই রাশিয়া সীমান্তে শক্তি বাড়াচ্ছে। রাশিয়া অবশ্য বারবার বলছে, ইউক্রেইনে হামলার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো এ নিয়ে আশঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।রাশিয়াকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ও এর নেটো মিত্রদেশগুলো ইউক্রেইনে সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে এবং মস্কোকে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নানা শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মুখে পড়ার হুমকিও দিয়ে যাচ্ছে।
মস্কোও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে একগাদা দাবি জানিয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ইউক্রেইনকে নেটোর প্রতিরক্ষা জোটে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে নেটোর সেনা হ্রাসের দাবিও রয়েছে।পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার এসব দাবি মানতে একেবারেই রাজি নয়। বরং তারা মস্কোর সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র তৈরি কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা এবং নতুন করে চুক্তি করতে আগ্রহী।ফ্রান্সের একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘‘রাশিয়ার লক্ষ্য শুধু ইউক্রেইন নয়, বরং দেশটি নেটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নীতির একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চায়।”তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার আলোচনাই ইউক্রেইনে যুদ্ধাবস্থা প্র্রশমনে যথেষ্ট হবে। ‘‘আমার বিশ্বাস, প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী হবেন।”মস্কো সফরে যাওয়ার আগে ম্যাক্রোঁ রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে তার আলোচনা ‘ইউরোপের কোনও রাষ্ট্রের দুর্বলতার প্রকাশ নয়’ বলেও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।তিনি বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই আমাদের ইউরোপীয় ভাইদের রক্ষা করব এবং নতুন একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব দেব যার মাধ্যমে তাদের (ইউক্রেইনের) সার্বভৌমত্ব এবং শান্তি সুরক্ষিত থাকবে।”‘‘এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা রাশিয়াকে সম্মান দেখাব এবং সেই দেশ ও তাদের জনগণের মনবেদনাকে অনুধাবন করতে পারব।”
ম্যাক্রোঁ এর আগেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের কথা বলেছেন। গত মাসে তিনি বলেছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে না থেকে বরং নিজেরাই মস্কোর সঙ্গে আলোচনার পথ উন্মুক্ত করা।
আগামী এপ্রিলে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে ইউক্রেইন-রাশিয়া সম্ভাব্য যুদ্ধ বন্ধে আলাচনার উদ্যোগ নিয়ে ম্যাক্রোঁ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বলেও অভিমত রাজনীতি বিশ্লেষকদের।