স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন জান্তার বিরোধিতা করছে এমন ছেলে, মেয়ে, ভাতিজি, ভাতিজা ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের হিড়িক পড়েছে মিয়ানমারে। গত তিন মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাতটি পরিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
মূলত জান্তা সরকারের ভয়েই পরিবারগুলো এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। নভেম্বরে জান্তা সরকার এক ঘোষণায় জানায়, তারা তাদের বিরোধীদের সম্পত্তি জব্দ করবে এবং প্রতিবাদকারীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য লোকজনকে গ্রেপ্তার করবে। এ ঘোষণার পর সেনাবাহিনী বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালানো শুরু করে। রয়টার্স জানিয়েছে, তারপর থেকেই বেশি বেশি সংখ্যায় এমন বিজ্ঞপ্তি দেখা যেতে শুরু করে।
সামরিক শাসন প্রতিরোধের জন্য গঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়া সাবেক গাড়ি বিক্রয়কর্মী লিন লিন বো বো তেমনি একজন যাকে তার বাবা-মা ত্যাজপুত্র করেছেন। এটিসহ এ ধরনের প্রায় ৫৭০টি বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করেছে রয়টার্স। “আমরা লিন লিন বো বোকে ত্যাজ্যপুত্র করার ঘোষণা দিচ্ছি কারণ সে কখনোই তার বাবা-মায়ের কথা শোনেনি,” নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত মিরর সংবাদপত্রে বোয়ের বাবা সান উয়িন এবং মা টিন সোয়ের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এমনটিই বলা হয়েছে।মিয়ানমার থেকে পালানোর পর ২৬ বছর বয়সী বো এখন থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী একটি শহরে আছেন। সেখান থেকে রয়টার্সকে তিনি জানান, তাকে খুঁজতে সৈন্যরা তাদের বাড়িতে যাওয়ার পর তার মা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন বলে তিনি নিজেই তাকে জানিয়েছেন। এর কিছুদিন পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিটি দেখার পর তিনি কেঁদেছিলেন বলে জানান।
“চাপের মুখে পরিবারগুলোর এমনটি করা ছাড়া কোনো পথ নেই, এই বলে বন্ধুরা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম,” রয়টার্সকে বলেছেন তিনি।রয়টার্সের পক্ষ থেকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেননি।
১৯৮০ দশকের শেষ দিকে ও ২০০৭ সালের অস্থিরতার সময়ও বিরোধী আন্দোলনকারীদের পরিবারগুলোকে লক্ষ্যস্থল করা কৌশল নিয়েছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। কিন্তু গত বছর ক্ষমতা দখল করার পর থেকে তারা এই কৌশল আরও ঘন ঘন ব্যবহার করছে বলে দেশটির এক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন।