স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৩ জুলাই: প্যারিসের শহরতলীতে পুলিশের গুলিতে নিহত কিশোরের দাদি বলেছেন, তিনি চান তার নাতির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ফ্রান্সজুড়ে চলা দাঙ্গা বন্ধ হউক।টানা ষষ্ঠ রাতজুড়েও অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে, এমন শঙ্কা বিরাজ করার কারণে রোববার রাতেও ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেগাল্ড দাগমানা।দাঙ্গাকারীরা রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে বহু গাড়ি পুড়িয়েছে, দোকানপাট লুটপাট করার পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তারা নগরীর টাউন হল ও পুলিশ স্টেশনগুলোকে লক্ষ্যস্থল করেছে, হামলা চালিয়েছে প্যারিসের শহরতলীর এক মেয়রের বাড়িতে যখন তার স্ত্রী ও সন্তানরা ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন।সংকট মোকাবেলার জন্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জার্মানিতে এক রাষ্ট্রীয় সফর স্থগিত করেছেন। তার বদলে সোমবার তিনি গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্রান্সের শহর ও নগরগুলোর ২২০ জন মেয়রের সঙ্গে ও পার্লামেন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকালে প্যারিসের নঁতেয়ার একটি ট্র্যাফিক সিগন্যালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৭ বছর বয়সী কিশোর নাহেল এম। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সহিংস দাঙ্গায় রূপ নেয়ায় প্রায় ছয়দিন ধরে ফ্রান্স অস্থির হয়ে আছে।ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার নঁতেয়ায় নাহেলের দাফনের পর থেকে ৭১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সংখ্যাটি শুক্রবার গ্রেপ্তার করা ১৩১১ ও বৃহস্পতিবারের ৮৭৫ জনের চেয়ে কম।কিন্তু অস্থিরতা থেমে গেছে এটি বলার মতো সময় এখনও হয়নি বলে সতর্ক করেছেন কর্মকর্তারা।প্যারিসের পুলিশ প্রধান লোরাঁ নুনিয়েজ বলেছেন, “স্পষ্টতই ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে, কিন্তু আসছে দিনগুলোতেও আমরা সক্রিয় থাকবো। আমরা খুব সজাগ আছি, কেউই জয় দাবি করছে না।”নাহেলের দাদি (যাকে ফরাসি গণমাধ্যম নাদিয়া নামে শনাক্ত করেছে) বলেছেন, দাঙ্গাকারীরা তার নাতির মৃত্যুকে ধ্বংস করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে আর তাদের পরিবার শান্তি চায়।“আমি তাদের থামতে বলছি,” বিএফএম টেলিভিশনকে বলেছেন তিনি।
“নাহেল মারা গেছে। আমার মেয়ের ক্ষতি হয়েছে, তার জীবন শেষ।”ইচ্ছাকৃতভাবে নাহেলকে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার জন্য গণ-অর্থায়নের আহ্বানে ৬ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি ইউরোর প্রতিশ্রুতি মেলা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে নাদিয়া বলেন, “আমার হৃদয় বেদনা হচ্ছে।”২০১৮ সালে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন ফ্রান্সের অধিকাংশ অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর এবারের দাঙ্গাই মাখোঁকে সবচেয়ে বড় ধরনের সংকটে ফেলেছে।রোববার দিবাগত রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মার্সেইতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এখানে অনেক রাত পর্যন্ত দাঙ্গাবাজ তরুণদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে।এর পাশাপাশি প্যারিস, দক্ষিণ ফ্রান্সের রিভিয়েরা অঞ্চলের শহর নিস এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্তাসবুর্গেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।