স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। ১০ জানুয়ারি : সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি এবং ব্যবহারের মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত।
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স সোমবার এ খবর দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে বন্দি সু চির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনসহ ১১টি মামলা হয়েছে। সবগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলে নোবেলজয়ী এ নেত্রীর সর্বোচ্চ ১০০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।
সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উসকানি দেওয়া এবং করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ ভঙ্গের অভিযোগে এক মামলায় গত ডিসেম্বরে সু চির চার বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে তা কমিয়ে দুই বছর করা হয়।
রয়টার্স জানায়, সোমবার দেওয়া রায়ে মিয়ানমারের আইন লঙ্ঘন করে একটি অননুমোদিত ওয়াকিটকি নিজের কাছে রাখার দায়ে দুই বছর এবং একটি সিগন্যাল জ্যামার সেট রাখায় এক বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। দুটি সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি।মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় সামরিক জান্তার একটি বিশেষ আদালতে সু চির রুদ্ধদ্বার বিচার হচ্ছে। গণমাধ্যমকে এই বিচার প্রক্রিয়ার খবর জানানো হচ্ছে না এবং সু চির আইনজীবীদেরও সংবাদ মাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না।রয়টার্স লিখেছে, মামলার বিচারকাজে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে কয়েদীদের পোশাক হিসেবে সাদা জামা এবং বাদামি রংয়ের লুঙ্গি পরে আদালতে হাজির হতে দেখা গেছে।
গতবছর ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সেদিনই সু চি ও তার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সু চিকে তখন থেকেই গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।সামরিক অভ্যুত্থানে সু চি আটক হওয়ার পরপরই পুলিশের একটি নথিতে বলা হয়েছিল, তার বাড়িতে ছয়টি ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে। সেগুলো অবৈধভাবে আমদানি করে অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়েছে।গত মাসে দেশটির সামরিক শাকস মিন অং হ্লাই জানিয়েছেন, সু চি এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টকে বিচার চলার সময়ে একই স্থানে রাখা হবে এবং তাদের আপাতত কারাগারে পাঠানো হবে না।সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) অন্যতম নেতা মিন্টকেও গত ডিসেম্ববরে ‘গণ অসন্তোষে উসকানি’ এবং ‘কোভিডবিধি ভাঙার’ অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করে সাজা দেয় আদালত।
সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় সু চি ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত বহু বছর গৃহবন্দি ছিলেন। ওই বছর মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি বড় ধরনের জয় পায়।২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে তার দল ফের জয় পায়। এর কয়েক প্তাহ পর নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে।নির্বাচন কমিশন সামরিক বাহিনীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরে স্বাধীন পর্যবেক্ষকরাও জানান, সেনাবাহিনীর ওই অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
ওই অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অশান্তি চলছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়। সেই বিক্ষোভ দমাতে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মাত্রা আরেক দফা বাড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় রাজনৈতিক কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ গণতন্ত্রপন্থি ১০ হাজারের বেশি মানুষকে।পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের হিসাবে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে ১ হাজার ৩০৩ জন নিহত হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে।