Saturday, February 15, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকাবুল বিমানবন্দরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ফিরেছে পরিবারের কাছে

কাবুল বিমানবন্দরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ফিরেছে পরিবারের কাছে

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৯ জানুয়ারি। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর সেখানকার বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি শিশুকে অবশেষে খুঁজে পাওয়া গেছে। দুই মাসের শিশু সোহাইল আহমাদিকে শনিবার তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিবিসি জানায়, গতবছর ১৯ অগাস্ট কাবুল বিমানবন্দরে আফগানিস্তান ছাড়তে জড়ো হওয়া যাত্রীদের ব্যাপক ভিড়ের মধ্যে শিশু সোহাইলকে বেড়ার ওপর দিয়ে এক মার্কিন সেনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন তার বাবা-মা।

বিমানবন্দরের দেয়ালের ওপর দিয়ে তারা সোহাইলকে ওই সেনার হাতে তুলে দেন। ভেবেছিলেন, বিমানবন্দরে ঢোকার পর শিশুকে নিয়ে নেবেন। কিন্তু তালেবানের সদস্যরা তখন বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় কমানোর চেষ্টায় সবাইকে পেছনে ঠেলতে থাকে। এ কারণে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেরী হয়ে যায় সোহাইলের বাবা মির্জা আলি আহমাদি এবং মা সুরাইয়ার। এরপর তারা আর তাদের শিশু সন্তানকে খুঁজে পাননি।

নভেম্বরে এ ঘটনা নিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে শিশুটির একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে শিশুটি কাবুলে আছে বলে খোঁজ পাওয়া যায়। হামিদ সাফি নামের ২৯ বছর বয়সী এক ট্যাক্সি চালক শিশুটিকে বিমানবন্দরে পেয়ে তাকে নিজের মতো করে লালন-পালন করতে বাড়ি নিয়ে যান।

শিশুটির খোঁজ পাওয়ার পর দীর্ঘ সাত সপ্তাহের আলোচনা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে তালেবান পুলিশের হস্তক্ষেপে সাফি শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে কাবুলে থাকা তার  আত্মীয়দের কাছে ফিরিয়ে দেন। শিশুটিকে ফেরত পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে হামিদ সাফি ও তার স্ত্রীকে।

পরিবারের সদস্যরা বলছে, এখন সোহাইলকে তার বাবা-মা ও ভাইবোনদের ‍কাছে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে। কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিল শিশুটির বাবা-মা।

সোহাইলের বাবা মির্জা আলি আহমাদি আফগানিস্তানে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ ছিল তার। বিমানবন্দরের ভেতর অনেক খুঁজেও ছেলেকে না পেয়ে পরবর্তীতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলেন আহমাদি।

সেখানকার কর্তৃপক্ষ আহমাদিকে জানায়, সোহাইলকে হয়ত আলাদাভাবে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু পরিবারের বাকি সদস্যদের টেক্সাসের একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েক মাসেও তারা তাদের সন্তানের কোনও খোঁজ জানতে পারেননি।

সোহাইলকে খুঁজে পাওয়া ট্যাক্সি চালক হামিদ সাফি ঘটনার বর্ণনায় বলেন, তিনি বিমানবন্দরে পড়ে থেকে একা একা কাঁদতে দেখতে পেয়েছিলেন শিশুটিকে । তার বাবা-মাকে অনেক খুঁজেও বের করতে না পেরে সোহাইলকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

সাফির আরও তিনটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তবে সাফির মা মৃত্যুর আগে সাফির একটি পুত্র সন্তান দেখতে চেয়েছিলেন। এ কারণে সাফি শিশু সোহাইলকে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

কিন্তু শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর সাফির প্রতিবেশীরা বিভিন্ন মন্তব্য করতে শুরু করেন। তারা জানান, কয়েকমাস আগে সাফি একটি শিশুকে নিয়ে এসেছেন। ছবিগুলো দেখেও তারা চিনতে পেরেছে বলে জানায়। এরপর সোহাইলের বাবা মির্জা আহমাদি আফগানিস্তানে যোগাযোগ করে তার শ্বশুর কাসেম রাজাওয়িকে সাফির খোঁজ বের করতে বলেন এবং সোহাইলকে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানান।রাজাওয়ি শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সি চালক সাফির খোঁজ বের করেন। কিন্তু সাফি শিশু সোহাইলকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সোহাইলের পরিবার রেড ক্রসের সহযোগিতাও চেয়েছিল। তবে পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে নিস্পত্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে।

স্থানীয় থানার প্রধান এলাকা নিয়ন্ত্রক হামিদ মালাং শনিবার বলেন, “শিশুটির পিতামহের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হামিদ সাফিকে খুঁজে পেয়েছি। আমাদের কাছে থাকা প্রমাণের ভিত্তিতে শিশুটিকে চিনতে পেরে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।”

পুলিশের উপস্থিতিতে অবশেষে শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য