স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১৪ জুন: ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি মারা গেছেন সোমবার; রেখে গেছেন ব্যবসার বিশাল সাম্রাজ্য।সফল ফুটবল ক্লাব এসি মিলানসহ ইতালির সবচেয়ে নামকরা কোম্পানিগুলোতে মালিকানার মাধ্যমে গড়া তার এই অঢেল সম্পদ পাঁচ সন্তানের মধ্যে কীভাবে বণ্টন হবে, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেরলুসকোনির সম্পদের পরিমাণ ৭৬০ কোটি ডলার ছিল বলে হিসাব করেছে ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ারর্স ইনডেক্স।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালির সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বেরলুসকোনি চরম বিতর্কের মধ্য দিয়ে কীভাবে সম্পদের এই পাহাড় গড়লেন, এক প্রতিবেদনে সেই বিশ্লেষণ করেছে সিএনএন।
মিডিয়া মুঘল
ইতালির চারবারের প্রধানমন্ত্রী বেরলুসকোনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ৫৭ বছর বয়সে। তার আগে ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে আবাসন ব্যবসায় বিশাল সম্পদ পুঞ্জীভূত করেন। মিডিয়া টাইকুন হিসেবে পরিচিত পাওয়ার আগেই তিনিই এসব করে ফেলেন।সত্তরের দশকে টেলিমিলানো নামে একটি টিভি কেবল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আরও দুটি কেবল চ্যানেল কিনে ফেলেন। ১৯৭৮ সালে এই চ্যানেলগুলোরক নবগঠিত পারিবারিক হোল্ডিং কোম্পানি ‘ফিনিনভেস্ট’ এর অন্তভুর্ক্ত করেন। এই ফিনিনভেস্ট এর মাধ্যমেই বেরলুসকোনি এসি মিলানসহ ইউরোপের কিছু বড় মিডিয়া ফার্মের অংশীদারিত্ব অর্জন করেন।রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালের শেষ দিকে ওই হোল্ডিং কোম্পানিতে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন তিনি। ‘মিডিয়াসেট’ নামে পরিচিত মিডিয়া কোম্পানি ‘মিডিয়াফরইউরোপ’ এর সবথেকে বড় শেয়ারহোল্ডার (৪৮ শতাংশ) হল এই ফিনিনভেস্ট।মিডিয়াফরইউরোপ এর বাজার মূলধনের পরিমাণ ১১৭ কোটি ডলার। ইতালি ও স্পেনে বাণিজ্যিক টিভি চ্যানেল পরিচালনা করে এই কোম্পানি। জার্মানির ম্যাস মিডিয়া কোম্পানি ‘প্রোসিবেনস্যাট ডট ওয়ান (পিবিএসএফএফ) এর একটি বড় অংশের মালিকও এটি।ইতালির বই ও ম্যাগাজিনের সবচেয়ে বড় প্রকাশনা কোম্পানি মন্ডাডোরির ৫৩ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফিনিনভেস্ট। এই কোম্পানি ৩১ বছর এসি মিলানের মালিকানায় থাকার পর ২০১৭ সালে ৭৯ দশমিক ৬ কোটি ডলারে ক্লাবটি বিক্রি করে দেয়।বেরলুসকোনির মৃত্যুতে সোমবার এই ক্লাব এক টুইটে গভীর দুঃখপ্রকাশ করে শোক জানিয়েছে।
আইনি ঝামেলা
বেরলুসকোনিকে নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অনেকগুলোই তার ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত।প্রায় দুই দশকের রাজনীতিতে অন্তত ১৭টি অভিযোগে তার বিচার হয়েছে; যার মধ্যে আত্মসাৎ, কর ফাঁকি ও ঘুষের অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগ তিনি বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন এবং অনেক মামলা শেষমেষ আপিলে বাতিল হয়ে গেছে।২০১২ সালে মিলানের একটি আদালত ইতালির প্রাক্তন এই নেতাকে কর ফাঁকির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে। প্রসিকিউটররা তখন দেখতে পান, বেরলুসকোনি এবং মিডিয়াসেটের কর্মকর্তারা চলচ্চিত্রের টিভি স্বত্ব কিনে নিয়ে পরে বেশি দামে বিক্রি করে দেন। প্রসিকিউটররা বলেন, এই জালিয়াতির মাধ্যমে জড়িতরা বড় ধরনের কর ফাঁকি দিয়েছেন।
এরপর কী
বেরলুসকোনির দুই সংসারে ছেলেমেয়ে আছেন পাঁচজন। তাদের সবাই ফিনিনভেস্টের উল্লেখযোগ্য শেয়ারের অংশীদার। তাদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় ৫৬ বছর বয়সী মারিনা ২০০৫ সাল থেকে এ কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে, বাবার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে মারিনার।বেরলুসকোনির আরেক সন্তান ৫৩ বছর বয়সী পিয়ের সিলভিও মিডিয়ারফরইউরোপ এর প্রধান নির্বাহী। সোমবার এক পর্যায়ে ওই কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশ বেড়েছিল। তবে বেরলুসকোনির মৃত্যুতে কোম্পানির মালিকানায় সম্ভাব্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে দিনশেষে দর খানিকটা কমে যায়।রয়টার্স জানিয়েছে, ফিনিনভেস্টে আলাদাভাবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে মারিনা ও পিয়েরের হাতে। যেখানে যৌথভাবে ২১ দশমিক ৪ শতাংশের মালিক বেরলুসকোনির দ্বিতীয়পক্ষের তিন সন্তান।