Monday, January 13, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকসোভোতে সার্ব বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২৫ নেটোসেনা আহত

কসোভোতে সার্ব বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২৫ নেটোসেনা আহত

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,৩০ মে: কসোভোর উত্তরাঞ্চলে সার্ব বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনটি টাউন হলের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা জনা পচিশেক নেটো সেনা আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিকও তার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ যুদ্ধ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।নেটো নেতৃত্বাধীন শান্তিরক্ষা মিশন কেএফওআর কসোভোতে সোমবারের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে।“বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস অংশকে মোকাবেলা করার সময় কেএফওআর বহরে থাকা ইতালি ও হাঙ্গেরির একাধিক সেনা বিনা উসকানিতে আক্রমণের শিকার এবং চামড়া ছিলে যাওয়া, হাড়ে চিড় ধরা ও দাহ্য পদার্থের বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে,” বিবৃতিতে তারা এমনটাই বলেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।হাঙ্গেরির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টফ জালে-বব্রভনিস্কি বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হাঙ্গেরির ৭ সেনা গুরুতর আহত হয়েছে, চিকিৎসা সেবা দিতে তাদেরকে হাঙ্গেরিতে নিয়ে আসা হবে।তিনি ২০ সেনার আহত হওয়ার কথা জানান, যাদের মধ্যে ইতালির সেনারাও রয়েছে।

“যা ঘটেছে তা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। কসোভো কর্তৃপক্ষের দিক থেকে একতরফা সিদ্ধান্ত এড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ; একই সঙ্গে সব পক্ষের উচিত পিছু হটে উত্তেজনা প্রশমিত করা,” বলেছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ভুচিক বলেছেন, সংঘর্ষে ৫২ সার্ব আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভোসা ওসমানি সোমবারের সংঘর্ষের দায় ভুচিককে দিয়ে বলেছেন, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কসোভোকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন।“সার্বদের অবৈধ সংগঠন, যেগুলো অপরাধীদের সংগঠনে পরিণত হয়েছে, তারা কসোভো পুলিশ, কেএফওআরের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করেছে। যারা কসোভোর উত্তরাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে ভুচিকের আদেশ মেনেছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে,” টুইটারে বলেছেন ওসমানি।ভুচিক এদিকে উত্তেজনা সৃষ্টির দায় দিয়েছেন কসোভোর প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তিকে। তিনি কসোভোর সার্বদের নেটো সেনাদের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলার আহ্বানও জানান।

কসোভোর ‍উত্তরাঞ্চলের সার্ব অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আলবেনীয় বংশোদ্ভূত মেয়ররা দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই এলাকাগুলোতে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। এই মেয়ররা যে নির্বাচনে জিতেছিলেন, সেবার ভোট বয়কট করেছিল সার্বরা।সোমবার কসোভোর উত্তরে জেভেকান শহরে নিরাপত্তা ব্যারিকেড টপকে পৌরসভা ভবনের দিকে আগুয়ান সার্বদের লক্ষ্য করে কসোভো পুলিশ পিপার গ্যাস ছোড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।অন্যদিকে সার্ব বিক্ষোভকারীরা নেটো সেনাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোড়ে; তারা কসোভোর পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায়। বিক্ষোভকারীরা এদিন নেটোর অনেক গাড়িতে স্প্রে দিয়ে ইউক্রেইনে রাশিয়ার অভিযানের অন্যতম প্রতীক ‘জেড’ও লিখে দেয়।সীমান্তের কাছে লেপোসাভিচ নামের আরেকটি শহরে দাঙ্গা মোকাবেলার উপযুক্ত পোশাক পরা মার্কিন শান্তিরক্ষীরা কয়েকশ ক্রুদ্ধ বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে টাউন হলকে রক্ষায় এর চারপাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা পরে শহরের নতুন মেয়রের গাড়িতে ডিম ছুড়ে মারে।নেটো শান্তিরক্ষীরা ক্ষুব্ধ স্থানীয় সার্বদের হাত থেকে জুবিন পোটোক শহরের টাউন হলকে রক্ষায়ও চারপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল, জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।

পরে সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক প্রেসিডেন্ট ভুচিক সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ যুদ্ধ প্রস্তুতিতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।কসোভোর সার্বদের মধ্যে বেলগ্রেডের সমর্থনপুষ্ট সবচেয়ে বড় দল সার্ব লিস্টের উপপ্রধান ইগর সিমিচ উত্তরাঞ্চলে আগুনে ঘি ঢালার দায় কসোভোর প্রধানমন্ত্রী কুর্তিকে দিয়েছেন।“আমরা শান্তি চাই। ওইসব এলাকায় যে আলবেনীয়রা থাকেন, তারাও শান্তি চান। কেবল কুর্তিই চান অরাজকতা তৈরি হোক,” জেভেকানে সাংবাদিকদের বলেছেন সিমিচ।কসোভোর উত্তরে সংখ্যাগরিষ্ঠ সার্বরা ২০০৮ সালে অঞ্চলটির সার্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে কখনোই মেনে নেয়নি। তারা এখনও বেলগ্রেডকেই তাদের রাজধানী মনে করে।পুরো কসোভোতে আলবেনীয়রা ৯০ শতাংশের বেশি হলেও উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় সার্বরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় হওয়া এক চুক্তিতে এসব এলাকার পৌরসভাগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা বলা হলেও, তা এখনও কার্যকর হয়নি।এসব শহরের সার্বরা চলতি বছরের এপ্রিলে হওয়া স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, যে কারণে নর্থ মিত্রোভিচাসহ চারটি সার্ব-অধ্যুষিত পৌরসভায় শেষমেষ আলবেনীয় প্রার্থীরাই জিতে যায়। তবে এসব শহরে ভোট পড়েছে খুবই কম, মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ।

যে চারটি শহরে এই কাণ্ড হয়েছে, তার মধ্যে কেবল নর্থ মিত্রোভিচাতেই সোমবার কোনো সংঘাত-সহিংসতা দেখা যায়নি।সার্বরা চাইছে, কসোভো সরকার আলবেনীয় মেয়রদের টাউন হলগুলো থেকে সরিয়ে দিয়ে বেলগ্রেডের অর্থায়নে পরিচালিত স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়ার অনুমতি দিক।শুক্রবার চারটি শহরের তিনটিতে আলবেনীয় মেয়ররা পুলিশ পাহারায় তাদের কার্যালয়ে যান। সেসময় তাদের গাড়িবহর লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছিল। এর পাল্টায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ছোড়ে।

শুক্রবার মেয়রদের কার্যালয়ে পাঠানোর এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে কসোভোর স্বাধীনতার পক্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও।তারা বলছে, সার্ব অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে জনসমর্থনবিহীন কাউকে মেয়র বসিয়ে দেওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।কুর্তি অবশ্য তার সরকারের অবস্থানের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধানের সঙ্গে ফোনালাপের পর টুইটে তিনি বলেন, “নির্বাচিত মেয়ররা সব নাগরিকদের সেবা দেবে, এমনটাতেই জোর দিচ্ছি আমরা।”অন্যদিকে সার্বিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিকা দাসিক জেনিভাভিত্তিক একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সার্ব অধ্যুষিত পৌরসভাগুলোতে সার্বদের ভোটে নির্বাচিত হয়নি এমন কাউকে মেয়র হিসেবে রাখা সম্ভবই নয়।সোমবার কুর্তির সঙ্গে বৈঠক শেষে কসোভোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ্রি হভেনিয়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, “সরকারি সম্পদ ও স্থাপনাকে ঘিরে আজকের সংঘর্ষের খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। কেএফওআরের গাড়ি ও পুলিশের গাড়িতে গ্রাফিতি দেখেছি আমরা, শুনেছি সাংবাদিকদের ওপরও হামলা হয়েছে। এটা মোটেও উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া নয়। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য