Tuesday, January 14, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদমিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে ‘নীরবে’ কাজ করছে ইন্দোনেশিয়া

মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে ‘নীরবে’ কাজ করছে ইন্দোনেশিয়া

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,৬ মে: মিয়ানমারে সংঘাত প্রশমন ও দেশটিতে শান্তি ফেরাতে অন্যতম স্টেকহোল্ডার হিসেবে কয়েক মাস ধরে অনেকটা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে একযোগে মিয়ানমারে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগের জন্যও কাজ করছে।ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি গতকাল শুক্রবার এসব কথা বলেছেন।এর আগে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের জোট আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে প্রচেষ্টা শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। এ জন্য ইন্দোনেশিয়ার কূটনীতিকেরা মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ৬০ বারের বেশি যুক্ত হয়েছে।রেতনো মারসুদি আরও বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র দল, দেশটির গণতন্ত্রপন্থী ছায়া সরকার—সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে জাকার্তা।

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন ও তা রক্ষা করা মিয়ানমারে শান্তি ফেরানোর পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।‘গত চার মাসে আমরা অনেক কিছু করেছি। মিয়ানমারের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে আনতে আমরা সেতুবন্ধন হিসেবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’রেতনো মারসুদি বলেন, ‘মিয়ানমার ইস্যুতে জাকার্তা “নন-মেগাফোন কূটনীতির”কৌশল বেছে নিয়েছে। এর অর্থ হলো, আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে চাই, যাতে তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে চায়।’মিয়ানমার ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়া নীরবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে রেতনো মারসুদি বলেন, ‘গত চার মাসে আমরা এ বিষয়ে অনেক কিছু করেছি। মিয়ানমারের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে আনতে আমরা সেতুবন্ধন হিসেবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।অন্যদিকে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী ছায়া সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, তাঁরা আসিয়ানের সভাপতি রাষ্ট্রটির সঙ্গে কাজ করছেন। কারণ, রাষ্ট্রটি মিয়ানমারে সংঘাত নিরসনে শান্তি সংলাপের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জাকার্তার এ উদ্যোগে আসিয়ানের অন্য সদস্যদেশগুলোর সমর্থন রয়েছে।

হতাশ আসিয়ান

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে জান্তা বাহিনী। এরপর দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ে অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন। কঠোর অবস্থানে যায় জান্তা প্রশাসন। মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। বিরোধীদের ওপর হিংসাত্মক দমন-পীড়ন চলে। অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশটি।এ পরিস্থিতিতে অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের রাজনীতিকদের অনেককে আটক করা হয়। অনেকে পালিয়ে যান। পরে তাঁদের অনেকেই জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্যের সরকার (ছায়া সরকার নামেও পরিচিত) গঠন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোও জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।শান্তি ফেরাতে ও নিজেদের জনগণের ওপর দমন-পীড়ন না চালাতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে বারবার আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান। এরপরও পরিস্থিতি না বদলানোয় হতাশা প্রকাশ করেছেন জোটের নেতারা। এ জন্য ২০২১ সালের শেষ ভাগে আসিয়ানের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জান্তা প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিষেধ করে এ জোট। বলা হয়, শান্তিপ্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আসিয়ানের সভায় আসতে পারবেন না।আগামী সপ্তাহে আসিয়ান নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে আসিয়ানের সভাপতি দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি জানিয়েছেন, এবারও জান্তা জেনারেলদের সম্মেলনে অংশ নিতে জোটের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হবে।রেতনো মারসুদি আরও জানান, ইন্দোনেশিয়া ইতিমধ্যে আসিয়ানের ১৯৫টি বৈঠকের আয়োজন করেছে। এসব বৈঠকে মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আঞ্চলিক উত্তেজনা নিয়েও নিজেদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ পেয়েছে। এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ আলোচনা হয়েছে গত মাসে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য