Tuesday, January 14, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদসীমান্ত পার করতে ৪০ হাজার ডলার ভাড়া চান বাসচালক, হাজারো পরিবার আটকা

সীমান্ত পার করতে ৪০ হাজার ডলার ভাড়া চান বাসচালক, হাজারো পরিবার আটকা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,২৯ এপ্রিল: সুদান থেকে পালিয়ে আসা একটি পরিবার বলছে, তারা মিসরের সীমান্তে আটকে আছে। সেখানে আরও কয়েক হাজার পরিবার আটকা। কারণ, চালক বাসভাড়া হিসেবে ৪০ হাজার ডলার দাবি করেছেন।দুই দিন আগে সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে সাত সদস্যের ওই পরিবার পালিয়ে গিয়েছে। ওই পরিবারে ১০ বছর বয়সের নিচে তিনজন শিশু রয়েছে। পরিবারটির সদস্য ফাদি আতাবানি বলেছেন, তাঁর পরিবারে ৮৮ বছরের এক নারী রয়েছেন। তাঁরা সবাই আটকা পড়েছেন।সীমান্তবর্তী শহর ওয়াদি হালফা থেকে বিবিসিকে ফাদি আতাবানি বলেন, এখানে কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন। কোনো বাসস্থান নেই। মানুষ স্কুলে ও জাজিমের ওপর ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু যাঁরা বাসে যাত্রা করবেন, তাঁদেরই সীমান্ত পার হওয়ার বিশেষ অনুমতি রয়েছে। হেঁটে সীমান্ত পার হওয়া সেখানে নিষিদ্ধ।

ওই পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। আতাবানি যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আতাবানি বলেন, ‘আমরা মরুভূমির মধ্যে রয়েছি। আমাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। আমি চাই ব্রিটিশ সরকার এখান থেকে সরে যেতে আমাদের সহায়তা করুক।’আতাবানি অভিযোগ করেন, আটকে পড়া মানুষদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছেন স্থানীয় বাসচালকেরা। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বাস ভাড়া করতে তিন হাজার ডলার ব্যয় হয়। আর এখন মাত্র ৩০ কিলোমিটার পার হয়ে বাসে সীমান্ত পার হতে ৪০ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়।৫৩ বছর বয়সী আতাবানি বলেন, কার কাছে এত অর্থ আছে? ব্যাংক বন্ধ। এটিএম মেশিন কাজ করছে না।

খার্তুমের বাসিন্দা হোসনা বিবিসিকে বলেন, সুদানের রাজধানী খার্তুমে তাঁর দুই মেয়ে আটকা পড়ে আছে। তিনি বলেন, যাতায়াতের জন্য তাদের একেকজনকে ৪০০ ডলারের বেশি খরচা করতে হয়েছে। সংঘর্ষের আগে মাত্র ২৫ ডলার খরচ করে এ পথে যাতায়াত করা যেত।সংঘর্ষ শুরুর আগে হোসনা মিসরের আসওয়ান শহরে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ঘরের পাশের জায়গায় কামানের গোলা পড়তে দেখেছে। আমি তাকে এখানে আনতে পারছি না। আমার স্বামী নেই। ছেলে নেই। তাদের সহায়তা করার কেউ নেই। আমি দিনের পর দিন সঞ্চয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করি।’অর্থ উপার্জনের আশায় হোসনা সীমান্তের ওই বাসস্টেশনের কাছেই একটি চায়ের দোকান খুলেছেন। আসওয়ানের কাছের শরণার্থীরা সেখানে জড়ো হয়েছেন।হোসনা বলেন, সুদান পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন মানুষের বাড়িতেও হামলা চলছে।

সুদান বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষাবিদ এসরা বানি আসওয়ানে পৌঁছেছেন। তিনি সেখানে থাকা মানুষদের সহায়তা করতে চান। এসরা বানি বলেছেন, বাসের ভাড়া খুব দ্রুত বেড়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, সেখানে পরিস্থিতি খুবই বিপর্যয়কর।১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর ও আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সে সময় থেকে চলা সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। কয়েক হাজার আহত হয়েছে।গত সোমবার দুই পক্ষ তিন দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি নবায়ন করা হয়। এরপরও বেশ কিছু এলাকায় সংঘর্ষ চলছে।সুদানের রাজধানী খার্তুম ও এর আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায় এক কোটি মানুষ খাবার, পানি ও জ্বালানির সংকটে রয়েছে।আতাবানি বলেন, তিনি মাত্র কয়েকটি কাপড় নিয়ে খার্তুম ছেড়েছিলেন। তিনি বলেন, জানি না এর শেষ কোথায়?

যুক্তরাজ্যে থাকা আতাবানির স্বজনেরা বলছেন, তাঁরা সহায়তার জন্য পররাষ্ট্র বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তারা বলেছেন, খার্তুমের কাছে ওয়াদি সেইদনা এলাকা থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাঁদের দুই দিন বাসে যেতে হবে।আতাবানি বিবিসিকে বলেন, ‘ওয়াদি সেইদনা এলাকায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। কেন সেখানে ঝুঁকি নিয়ে আমরা যাব।’গত বৃহস্পতিবার তুরস্ক বলেছে, ওয়াদি সেইদনা এলাকায় অবতরণ করতে আসা একটি বিমান লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে।বিবিসিকে পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, সুদানে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তাঁরা কাজ করছেন। সুদানে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।বিবিসি ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত সুদানি এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল এয়ার ফোর্স তাঁকে পোর্ট সুদানের রেড সি শহরে নিয়ে যান। পোর্ট সুদানে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত অনেক সুদানীয় চলে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো ফ্লাইট পাননি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য