স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,,২৫ এপ্রিল: ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের যে তুমুল লড়াই চলছে, তার মাঝে আটকা পড়েছে দেশটির জনগণ।সপ্তাহ খানেকের লড়াইয়ে মারা গেছে শত শত মানুষ, পালিয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ। খাবার ও পানি ছাড়াই লোকজনকে বাড়ি ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করতে হচ্ছে; আর ধীরে ধীরে দুর্মল্য হয়ে উঠছে পেট্রোল।গত ১৫ এপ্রিল সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ-সুদানি চিকিৎসক ইমান আবু গারজাহর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে সিএনএন। পরিবারের সঙ্গে রোজার ঈদ করতে সুদানে গিয়ে আটকা পড়ার ইমানের ভাষ্যে এসেছে পরিস্থিতির বর্ণনা।আমি ক্লান্ত। ভীষণ, ভীষণ ক্লান্ত। অবসাদগ্রস্ত বলাটা ভুল হবে না, একেবারেই বিধ্বস্ত। এতই উদ্বিগ্ন যে কেবলই অ্যাড্রোনালিন হরমোন নিঃসৃত হচ্ছে।সপ্তাহের শুরুতে ২৪ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির খবর শুনে খুশি ছিলাম, যার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল; কিন্তু সত্যি বলতে কি সেটা যুদ্ধবিরতি ছিল না, তবে তখন তা অতটা জোরাল ছিল না।(বৃহস্পতিবার]) আমরা সত্যিই সবাই ক্লান্তবোধ করছিলাম, আমরা সবকিছুর মধ্যে রোজা রাখছিলাম এবং সবাই চাইছিল রোজা যেন দ্রুত শেষ হয়। আমি ইফতার তৈরি করেছি, কয়েকটা ডিম ভেজেছি, টুনা মাছ দিয়ে ভালো কিছু তৈরির চেষ্টা করেছি। আর কিছু বাসি রুটিকে নরম করার চেষ্টা করেছি।খুব গভীররাতে বিকট শব্দ পেলাম। আমি জানি না আসলে কীসের শব্দ, সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্র?আমার বাবার চলফেরা খুব সীমিত হয়ে পড়ে। কারণ উনি অসুস্থ। তিনি এই সোফায় শুয়ে ছিলেন। বাবাকে লিভিং রুম থেকে সরিয়ে এমন জায়গায় নিতে হয়, যেখানে জানালা নেই, দেয়াল রয়েছে।
আমার কাজিনও আমাদের সঙ্গে ছিল। আমার মেয়ে একেবারেই ভেঙে পড়ে, তাকে সান্ত্বনা দিয়ে থামানো যাচ্ছিল না। আমরা যেখানে আশ্রয় নিই, তার পেছনের ঘরে আমার ৯৬ বছর বয়সী দাদি ছিলেন। তিনি গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন, কাঁপছিলেনও; ঘরে আওয়াজ আসছিল, কিন্তু আমি তা উপেক্ষা করছিলাম। আমার মাও সেখানে ছিলেন। আমার বোন… আমাদের সঙ্গে গৃহকর্মীও ছিল।আমাদের সঙ্গে সেখানে কেনিয়া থেকে আগত একজন ছিলেন। তিনি অমুসলিম, সে কারণে তার সাথে আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা শুরু করলাম। আমার মনে হচ্ছিল– তাতে তিনি কিছুটা সান্ত্বনা পাবেন এবং তিনি যে একা নয়, সেই ভরসা দিতে চাচ্ছিলাম।আমাদের কয়েকজন ইথিওপীয় গৃহকর্মীও রয়েছে এবং তারা ভীষণ ভয় পেয়েছিল। আমি তখন ভাবছিলাম, এই গরিব লোকজন নিজের দেশ ও পরিবার ছেড়ে সুদানের মতো জায়গায় এসেছে পরিবারকে কিছু টাকা পাঠানোর জন্য কিংবা নিরাপদ স্থানের খোঁজে এবং তাদের সঙ্গে যা ঘটে চলেছে, তা খুবই অন্যায্য মনে হচ্ছিল।আমার মনে হচ্ছিল, আমাদের অবস্থানের খুবই কাছে দু–তিনটি বিকট আওয়াজ হল। আমরা দোয়া পড়তে শুরু করলাম, আমরা যেন নিরাপদে থাকি; আর বাচ্চাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছি। যদি আমি অক্টোপাস হতাম, তাহলে আমার অনেকগুলো হাত, বাহু থাকত; তাতে করে অনেকের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে পারতাম।(শুক্রবার) আরও ঝাপসা হয়ে এল। আমি ঈদের নামাজের কোনো ডাক শুনিনি, যা শুনেই মন ভরে যেত। যুক্তরাজ্য থেকে আসার অন্যতম প্রধান কারণ এটি, কারণ আমি কেবল পরিবারের সঙ্গে একটি সুন্দর সময় কাটাতে চেয়েছিলাম। ঈদের সব জামাকাপড় ব্যাগে আছে। নেইল পলিশ, চুলের জিনিস। এমনকি আমি আমার মাসকারাও পরলাম না। ফলে বুঝতেই পারছে এটি কী ভীষণ খারাপ দিন!অনেক মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। মিশরে যাওয়ার জন্য অনেক লোক বাসের সিটের জন্য প্রস্তাব দেয়। একটি বড় পরিবার এবং প্রতিটি ব্যক্তি বা প্রতিটি গোষ্ঠী বা পরিবারের ভিন্ন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। (আমার দাদিকে) সরিয়ে নেওয়া আমার আট বছর বয়সী ভাগ্নেকে সরানোর মতো হবে না।আমার ভাতিজির কিছু ওষুধ দরকার। আমার মা, বাবা, দাদী ও আমার বোন– তারা সবার অবস্থা খুব খারাপ হবে, ওষুধ না থাকলে হয়ত তারা বাঁচবে না।আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করি। আমরা গেম খেলার চেষ্টা করি, আমরা সিনেমা দেখার চেষ্টা করি, কিন্তু আমাদের মনোযোগ যে একেবারে চলেই গেছে। কেউ বসে বসে সিনেমা দেখতে পারবে না।আমি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি– আমাদের তেল রয়েছে, আমাদের বিদ্যুৎ রয়েছে, আমাদের পানি আছে, কারণ পানির ট্যাংকটি চলমান রয়েছে। আমাদের গাড়ি চালু আছে, কিন্তু চলার জন্য কেবল পেট্রোল নেই।আমি সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে চলেছি। দুই পক্ষের বক্তব্যের লেখককে একই বলে মনে হয়– আমি আপনার ত্রাণকর্তা এবং বিজয়ী। আমি জানি, তারা উভয়ই মিথ্যাবাদী, কারসাজিকারী, রক্তপিপাসু মানুষ; আমাদের সেবা ও সুরক্ষা দিতে তাদের পয়সা দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের মর্যাদা বা জীবনের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।