Wednesday, May 21, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদকারাগার থেকে মুক্তি পেলেন হোটেল রুয়ান্ডার পল রুসেসাবাগিনা

কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন হোটেল রুয়ান্ডার পল রুসেসাবাগিনা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২৫ মার্চ: রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় যার ভূমিকার কারণে হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল সেই ব্যবসায়ী পল রুসেসাবাগিনা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল তার। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এ দণ্ড পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে সাজা হ্রাস করে মাত্র দেড় বছরের মাথায়ই মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে মুক্তির পর রুসেসাবাগিনাকে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের দুই দূতাবাস কর্মকর্তা তার সঙ্গে ছিলেন বলে ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে বাইডেন প্রশাসনের দুই ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।  রুসেসাবাগিনা দুই দিনের মতো রুয়ান্ডায় থেকে কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। দোহা থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাবেন তিনি, সেখানে স্থায়ী নাগরিকত্ব আছে তার।

শুক্রবার সকালেই রুসেসাবাগিনার মুক্তির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে রুয়ান্ডা সরকার। ঐতিহাসিকভাবে রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উষ্ণ হলেও রুসেসাবাগিনার কারাদণ্ড ও প্রতিবেশী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআরসি) রুয়ান্ডার কথিত হস্তক্ষেপ নিয়ে তাদের মিত্রতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  রুসেসাবাগিনার মুক্তির পর রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের মুখপাত্র স্টিফানি নিয়োমবায়ের এক টুইটে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র-রুয়ান্ডা সম্পর্ক পুনর্স্থাপনের যৌথ আকাঙ্ক্ষার ফল এটি।”  ২০২০ সালে দুবাই থেকে একটি প্রাইভেট বিমানে করে প্রতারণার মাধ্যমে রুসেসাবাগিনাকে রুয়ান্ডা নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। কাগামের শাসন বিরোধী একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারে অংশ নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।রুসেসাবাগিনার সমর্থকরা তার বিচার ও শাস্তিকে ‘রাজনৈতিক জোচ্চুরি’ বলে অভিহিত করে আসছিলেন। তার কারাদণ্ডকে ‘ভুলভাবে আটক’ বলে অভিহিত করে আসছিল ওয়াশিংটন। এর জন্য ন্যায্য বিচারের নিশ্চয়তা না থাকাকেও দায়ী করেছিল তারা।  ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যা চলার সময় রাজধানী কিগালির একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক ছিলেন রুসেসাবাগিনা। গণহত্যায় আট লাখের বেশি তুতসি এবং হুতু নিহত হয়েছিল৷ রুসেসাবাগিনা সে সময় ১২শ’র মতো মানুষকে হোটেলে আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন৷রুসেসাবাগিনার জীবনকাহিনী নিয়ে পরে হলিউডে ‘হোটেল রুয়ান্ডা’ নামের ছবি তৈরি হয়। ছবিটির কিছু অংশ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেটি অস্কারে মনোনয়ন পায় এবং পল রুসেসাবাগিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হয়ে খ্যাতি কুড়ান৷পরবর্তীতে রুসেসাবাগিনা ক্রমেই রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামের ঘোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। কাগামেকে স্বৈরশাসক বলে নিন্দা করা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে রুসেসাবাগিনার সমালোচনা বাড়তে থাকলে তিনি রাষ্ট্রের চোখে শত্রু হয়ে যান।

দুবাইয়ে নির্বাসনে থাকার সময় রুসেসাবাগিনা একটি বিরোধী কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিতেন। সেই কোয়ালিশনের একটি সশস্ত্র শাখা ছিল। আর তা হচ্ছে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন)। ২০১৮ সালে এক ভিডিও বার্তায় তিনি শাসনক্ষমতা পরিবর্তনের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “রুয়ান্ডায় পরিবর্তন আনতে আমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে মাঠে নামার সময় এসেছে।”এই এফএলএন এর বিরুদ্ধেই ২০১৮ সালে হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাদের হামলায় ৯ জন নিহত হয়েছিল।তবে রুসেসাবাগিনা বলছেন, তিনি কখনও সাধারণ মানুষকে হামলার নিশানা করার নির্দেশ কাউকেই দেননি। তবে এফএলএন কে অর্থ পাঠানোর কথা তিনি স্বীকার করেছেন তিনি।রুসেসাবাগিনার মুক্তি রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রুয়ান্ডাকে এম২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন দেওয়া বন্ধ করা ও প্রতিবেশী ডিআরসি থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ডিআরসিতে কোনো বিষয়ে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে রুয়ান্ডা।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!