Friday, March 29, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদচীনে ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া কীভাবে পারমাণবিক সাবমেরিন পাবে, জানালেন বাইডেন, মিত্ররা

চীনে ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া কীভাবে পারমাণবিক সাবমেরিন পাবে, জানালেন বাইডেন, মিত্ররা

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৪ মার্চ: ইন্দো-প্যাসিফিক ঘিরে চীনের যে উচ্চাশা, তা প্রতিহতে ২০৩০ এর দশকের প্রথমদিকেই অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানাল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন।সোমবার তারা তাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত জানায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।স্যান ডিয়েগোর মার্কিন নৌঘাঁটিতে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে পাশে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ২০২১ সালের অকাস অংশীদারিত্বের আওতায় হওয়া সাবমেরিন চুক্তিটি হল অবাধ ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের লক্ষ্যে আমেরিকার দুই ‘সুদৃঢ় ও সক্ষম মিত্রকে’ সঙ্গে নিয়ে করা যৌথ অঙ্গীকারের অংশ।

সুনাক একে ‘শক্তিশালী অংশীদারিত্ব’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, প্রথমবারের মতো সাবমেরিনের তিনটি বহর সমুদ্রগুলোকে মুক্ত রাখতে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে আসছে কয়েক দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করবে।”

চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ এর দশকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়াকে জেনারেল ডায়নামিক্সের বানানো তিনটি মার্কিন ভার্জিনিয়া শ্রেণির পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিন বিক্রি করতে চাইছে; প্রয়োজন পড়লে অস্ট্রেলিয়া যেন একই ধরনের আরও দুটি সাবমেরিনও কিনতে পারে, সে সুযোগও থাকছে, বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।এতে আরও বলা হয়েছে, অনেকগুলো ধাপের এই প্রকল্পে মার্কিন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রিটেনের পরবর্তী প্রজন্মের নকশা অনুসরণে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এসএসএন-অকাস নামের ‘তিনপক্ষের বানানো’ একটি নতুন শ্রেণির সাবমেরিন সমুদ্রে নামানো হবে।ব্রিটেন তার প্রথম এসএসএন-অকাস সাবমেরিনটি পাবে ২০৩০ এর দশকের শেষদিকে, অস্ট্রেলিয়া পাবে ২০৪০ এর দশকের শুরুতে। এই নৌযানগুলো বানাবে বিএই সিস্টেমস ও রোলস রয়েস।“এখানে, স্যান ডিয়োগেতে আমরা অকাস চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি একক বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছি, যা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা এবং আমাদের অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করবে,” অনুষ্ঠানে বলেছেন আলবানিজ।

অকাসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম শক্তির উৎস হিসেবে পরমাণু ব্যবহারের প্রযুক্তি কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে যাচ্ছে; সর্বশেষ ১৯৫০ এর দশকে তারা ব্রিটেনের সঙ্গে এমন ভাগাভাগি করেছিল।অনুষ্ঠানে বাইডেন জোরের সঙ্গে বলেছেন, যেসব সাবমেরিন অস্ট্রেলিয়া পেতে যাচ্ছে সেগুলো পারমাণবিক শক্তিধর হবে, পারমাণবিক অস্ত্রধর নয়।“ওইসব নৌযানে কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রই থাকবে না,” বলেছেন তিনি।তবে এই চুক্তির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বিপুল পরিমাণ খরচ করতে হবে। ২০৫৫ সাল নাগাদ এই প্রকল্পে তাদের ব্যয় ২৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মতো খরচ হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

আলবানিজ এই বিপুল ব্যয়ের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, “এই পরিকল্পনাটি কেবল প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক পরিকল্পনাই নয়, এটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও।”অকাসের ফলে আগামী চার বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার শিল্প খাতে ৬০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার বিনিয়োগ হবে এবং আগামী ৩০ বছরে প্রায় ২০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে বলে আশা অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর।অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মারলেস বলছেন, চুক্তিতে অস্ট্রেলিয়ার যা খরচ হচ্ছে, তা মূলত দেশের নিরাপত্তায় বিনিয়োগ।“এটা এমন এক বিনিয়োগ, যা না করে থাকতে পারবো না আমরা,” ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন তিনি।এ চুক্তিকে পারমাণবিক বিস্তারে বেআইনি কর্মকাণ্ড অ্যাখ্যা দিয়ে চীন অকাসের এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

“এই পরিকল্পনা মারাত্মক পারমাণবিক বিস্তারের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে, পারমাণবিক বিস্তার রোধের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে, অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ইন্ধন দেবে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করবে,” তিনদেশের ঘোষণার পর টুইটে এমনটাই বলেছে জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী মিশন।চীন কি অকাসের এই সাবমেরিন চুক্তিকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে দেখবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “না।”তিনি জানান, চীনের নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শিগগিরিই তার কথা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে কবে, কখন এই কথা হতে পারে, তা বলেননি তিনি।মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান শুক্রবার এই প্রসঙ্গে পারমাণবিক শক্তিধর সাবমেরিনসহ বেইজিংয়ের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে আঙুল তুলে বলেন, “অকাস নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি আমরা, আর তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও তথ্য চেয়েছি।”

অস্ট্রেলিয়া সাবমেরিন চুক্তি নিয়ে চীনকে ব্রিফিং করারও প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মারলেস।কেবল চীনই নয়, অকাস সাবমেরিন চুক্তি করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে সাধারণ সাবমেরিন কেনার চুক্তি বাতিল করে প্যারিসকেও ক্ষেপিয়েছে।চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রুদের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরোধ সক্ষমতা জোরদারে ২০২৭ সালের মধ্যেই পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের একাধিক সাবমেরিন দেখা যেতে পারে।এই কার্যক্রমে কয়েক বছরের মধ্যে চারটি মার্কিন ও একটি ব্রিটিশ সাবমেরিন যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।মার্কিন ভার্জিনিয়া শ্রেণির পারমাণবিক শক্তিধর অ্যাটাক সাবমেরিন অ্যাশভিলের পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ সফরের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের পথেই রয়েছে, বলেছেন তারা।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য