Sunday, January 26, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদথাইল্যান্ডের রাজনীতির মঞ্চে বোনের পর এবার থাকসিনের মেয়ে

থাইল্যান্ডের রাজনীতির মঞ্চে বোনের পর এবার থাকসিনের মেয়ে

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২১ ফেব্রুয়ারি: বিলিয়নিয়ার পরিবারের উত্তরসূরি তিনি। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে তাঁদের পরিবারের রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। অতীতে নির্বাচনে বিপুল ভোটে তাঁদের দল ক্ষমতায় এসেছে। পরিবার ও দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন নির্বাচনে জিততে চান তিনি ও তাঁর দল। শ্রমজীবী মানুষের ভোটে আবার আসতে চান থাইল্যান্ডের ক্ষমতার মসনদে। তাঁকে ঘিরেই এখন আবর্তিত হচ্ছে ফিউ থাই দলের রাজনীতি। তিনি থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা (৩৬)।সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক দল ফিউ থাইয়ের শক্তিশালী ঘাঁটি গ্রামীণ এলাকায় ক্লান্তিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন পেতংতার্ন। আশা করছেন, বাবা থাকসিন ও ফুফু ইংলাক যেভাবে অভূতপূর্ব জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন, তাঁকে জনগণ সেভাবে গ্রহণ করবে।দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ স্থবির হয়ে আছে। সুতরাং আবার অভ্যুত্থান হওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। দেশকে অবশ্যই অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। এ দেশের জনগণ আরও উন্নত জীবনযাত্রার দাবি রাখে

থাইল্যান্ডের পাথুম থানি প্রদেশে মাছের বাজারে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন ফিউ থাই দলের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। ৭ ফেব্রুোরি তোলা পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীরাজনীতিতে নবাগত পেতংতার্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ২০০১ সাল থেকে তিন দফায় থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ফিউ থাই যেসব কাজ শেষ করতে পারেনি, এবার তিনি সেগুলো শেষ করতে চান। ওই তিনবারই থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল প্রভাবিত আদালতের রুলিং এবং সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় থাকসিনের দল।  আগামী মে মাসে থাইল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রথমবারের মতো বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মতো কোনো বিদেশি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পেতংতার্ন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল ক্ষমতার প্রথম বছরে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছিল। কিন্তু ক্ষমতার চার বছরের মাথায় আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। ফলে আমরা সব লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি।’থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিনাওয়াত্রা পরিবারের উত্তরসূরি বলেন, ‘সুতরাং এখন প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের জনগণকে বোঝাতে হচ্ছে, আমাদের নীতি তাদের জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন আনবে। একমাত্র স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ মানুষের জীবনযাত্রায় টেকসই পরিবর্তন আনতে পারে।’ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানে থাকসিন ও ২০১৪ সালে তাঁর বোন ইংলাক ক্ষমতাচ্যুত হন। কারাদণ্ড এড়াতে দুজনই দেশের বাইরে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন। তাঁদের মিত্ররা বলছেন, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তাঁদের মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।থাইল্যান্ডের উবন রাতচাথানি প্রদেশে সমর্থকদের অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। ১৭ ফেব্রুয়ারি তোলাছবি: রয়টার্স

পুরোনো প্রতিশ্রুতি

থাকসিন, ইংলাক ঘুরে দলের দায়িত্ব এখন থাকসিনের ছোট মেয়ে পেতংতার্নের ঘাড়ে। জনগণকে বাবা-ফুফুর সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিতে ভর্তুকি, দীর্ঘপ্রতিশ্রুত উচ্চগতির রেলব্যবস্থা এবং বন্যা ও খরা মোকাবিলায় অবকাঠামো নির্মাণের মতো ইস্যুকে তিনিও কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।  ফিউ থাই দলের স্লোগান হচ্ছে, ‘বড় চিন্তা, দক্ষ কাজ’। ২০১৪ সালের প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশের যে অবস্থা, সেখান থেকে সংস্কারের কথা বলছে দলটি। পেতংতার্ন বলেন, ‘ভাবনার এই চিত্র বড় করতে হবে। আমাদের অবশ্যই দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এসব সমস্যার ভালোভাবে সমাধান করতে হবে।’ফিউ থাই দলের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এই প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে আসছে। এই পদে দলটির প্রার্থিতা এখনো ঠিক হয়নি। তবে জনমত জরিপে বেশ এগিয়ে আছেন পেতংতার্ন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রাউতের চেয়ে তাঁর জনসমর্থন দ্বিগুণের বেশি।আগামী নির্বাচনে ফিউ থাই দল জয়ী হবে বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ বলছেন।

তবে সমস্যাটা হবে সেনাবাহিনীর প্রভাব নিয়ে। কারণ, সেনাবাহিনী প্রভাবিত সিনেটের সঙ্গে তাদের লড়াই করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। নিম্নকক্ষের প্রধানমন্ত্রী দুই কক্ষ মিলেই নির্বাচিত করে থাকে।পেতংতার্ন বলেন, তিনি নিয়মিত দুবাইয়ে বসবাসরত তাঁর বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন এবং তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর বাবার বড় চিন্তা নির্বাচনের প্রচার নিয়ে। কারণ, তিনি এখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।তবে থাকনিসকন্যা বলেন, ‘আমি ঠিকঠাক আছি। এটা আমার দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা। আমার নিজের ব্যাপারে আমি বেশ সচেতন। আমি খুব বেশি পরিশ্রম করব না, যাতে আমার শরীরে বড় কোনো প্রভাব পড়ে।’
থাইল্যান্ডের নির্বাচনে সিনাওয়াত্রা পরিবার যতই জনপ্রিয় হোক, তাদের প্রতি জনগণের যতই ভালোবাসা থাকুক, একই সঙ্গে তাদের প্রতি মানুষের বিরক্তিও আছে। আছে ব্যাপক সমালোচনাও।বিরোধীরা অভিযোগ করে থাকেন, ঘনিষ্ঠ ধনী বন্ধুদের তারা বাড়তি সুবিধা দেয়। আর সস্তা জনপ্রিয় নীতিকে কাজে লাগিয়ে তারা দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীকে কিনে নেয়। তবে সিনাওয়াত্রা পরিবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ডে আগামী নির্বাচন আবার লড়াইরত প্রভাবশালী দুটি পক্ষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।পেতংতার্ন বলছেন, ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী অভ্যুত্থানসহ তাঁর পরিবারকে যেভাবে নাজেহাল করছে, তার প্রভাব দেশের ওপর পড়ছে। এ নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত। কারণ, এতে দেশ অনেক ‘পিছিয়ে’ যাচ্ছে।রাজনীতির নবাগত এই নেতা বলেন, ‘ক্ষমতা নিয়ে প্রভাবশালীদের এই লড়াই বিশ্ববাসীকে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে। তারা ভিন্ন আলোকে থাইল্যান্ডকে দেখছে। তারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চায় না। এমন পরিস্থিতি প্রত্যেকের সুযোগ ও সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে।’পেতংতার্ন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ স্থবির হয়ে আছে। সুতরাং আবার অভ্যুত্থান হওয়া কোনোভাবেই ঠিক হবে না। দেশকে অবশ্যই অগ্রগতি অর্জন করতে হবে। কারণ, এ দেশের জনগণ আরও উন্নত জীবনযাত্রার দাবি রাখে।’

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য