Thursday, January 16, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদতুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৮ হাজারের কাছাকাছি

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্যু বেড়ে ৮ হাজারের কাছাকাছি

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,৮ ফেব্রুয়ারি: তীব্র শীতের মধ্যেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধসে পড়া হাজারো ভবনের নিচে আটকা পড়াদের জীবিত উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।সোমবার ভোররাতের ওই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৭ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে; ধ্বংসযজ্ঞের যে ধরন, তাতে এই সংখ্যা এখনকার কয়েকগুণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।ভূমিকম্পে সম্ভবত শিশুই কয়েক হাজার মারা পড়েছে, বলেছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান ১০টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।তবে ১৯৯৯ সালের পর দেশটির দেখা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কর্তৃপক্ষের ধীর ও অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়ায় একাধিক শহরের বাসিন্দারাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।“একজনও নেই এখানে। তুষারপাত হচ্ছে, ঘর নেই আমাদের, কিছু নেই। কী করতে পারি আমি, কোথায় যাই?,” বলেছেন মুরাত আলিনেক, যার মালাতিয়াতে থাকা ঘর ধসে পড়েছে, আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ মেলেনি।

সোমবারের ওই ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্ক ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল ধসিয়ে দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, অগণিত মানুষ পরিণত হয়েছে উদ্বাস্তুতে।ওই ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর কাছাকাছি মাত্রার শক্তিশালী আরেকটি কম্পনও দেশদুটিকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাজে আবহাওয়া, সম্পদ ও ভারী যন্ত্রপাতির স্বল্পতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছানো ও সেখানে উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের।কোনো কোনো এলাকায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎও নেই।কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক সাড়া না পেয়ে অনেক জায়গায় বাসিন্দারা কোনো উপকরণ ছাড়া খালি হাতেই জীবিতদের উদ্ধারে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে মরিয়া হয়ে নেমে পড়েন।বিভিন্ন দাতা সংস্থার কর্মকর্তারা সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন; প্রায় ১২ বছরের যুদ্ধ শেষে দেশটি এমনিতেই চরম মানবেতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

তুরস্কে এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশকে ‘বিপর্যস্ত এলাকা’ ঘোষণা করে সেখানে তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। এর ফলে সরকার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে ওই প্রদেশগুলোর জন্য আলাদা আইন কার্যকর করতে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন অধিকার ও স্বাধীনতা স্থগিত বা সীমিত করতে পারবে।ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সাময়িক সময়ের জন্য রাখতে সরকার পর্যটন হাব আনতালিয়ার হোটেলগুলো খুলে দেবে, বলেছেন এরদোয়ান।ভূমিকম্পে দেশটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৯৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে, বলেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায়। আহতের সংখ্যা ৩৪ হাজারের বেশি।পশ্চিমের আদানা থেকে পূর্বের দিয়ারবাকির পর্যন্ত ৪৫০ কিলোমিটার এবং উত্তরের মালাতিয়া থেকে দক্ষিণের হাতয় পর্যন্ত ৩০০ কিলোমিটারভুক্ত প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ মানুষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ।

সিরিয়ায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে আড়াইশ কিলোমিটার দূরের হামাতেও মৃত্যুর খবর মিলেছে।“এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে। প্রতিটি মিনিট যাচ্ছে, ঘণ্টা যাচ্ছে, জীবিতদের খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমছে,” বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস।পুরো অঞ্চলজুড়েই উদ্ধারকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, অন্যদিকে মানুষজন ধ্বসংসস্তূপের বাইরে এই আশা নিয়ে অপেক্ষা করছেন যে বন্ধু, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের জীবিত পাওয়া যাবে।  সিরিয়া সীমান্তবর্তী হাতয়ের রাজধানী আনতাকিয়ায়য় উদ্ধারকারীর সংখ্যা এতই কম যে বাসিন্দারা নিজেরাই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে নেমে পড়েছেন। তারা হেলমেট, হাতুড়ি, লোহার রড ও দড়ির জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।

ভূমিকম্পের ৩২ ঘণ্টা পর ৮ তলা এক ভবন থেকে ৫৪ বছর বয়সী গুলুমসার নামের এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।এরপরই এক নারী উদ্ধারকর্মীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, “উনি (উদ্ধার হওয়া নারী) যেখানে ছিলেন, তার পেছনের ঘরেই আমার বাবা ছিলেন। দয়া করে, তাকেও বাঁচান।”কিন্তু তা হওয়ার নয়। উদ্ধারকর্মীরা পরে তাকে বুঝিয়ে বলেন, সামনের দিক থেকে তারা ওই ঘরে পৌঁছাতে পারবেন না, যেতে হলে তাদের দরকার খননযন্ত্র, যা দিয়ে প্রথমে দেয়াল সরানো যাবে।তুরস্কের ভূমিকম্প দুর্গত এলাকাগুলোতে ১২ হাজারের বেশি উদ্ধার ও অনুসন্ধানকর্মী কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আছেন ৯ হাজার সেনা। ৭০টিরও বেশি দেশ তুরস্কে উদ্ধারকারী দল এবং অন্যান্য সহযোগিতা পাঠিয়েছে।  কিন্তু পরিস্থিতির তুলনায় তা নগণ্য।

“বিশাল এলাকা। আমি এর আগে কখনোই এমনটা দেখিনি,” আদানা বিমানবন্দরে ট্রাকে যন্ত্রপাতি তুলতে গিয়ে বলেন জার্মানির দমকল ও উদ্ধার বিভাগের জোয়ানেস গাস্ত।ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার জেনিভায় সাংবাদিকদের বলেন, তুরস্ক-সিরিয়ায় এবারের ভূমিকম্পে ‘সম্ভবত কয়েক হাজার শিশুও মারা পড়েছে’।ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে উত্তরপশ্চিম সিরিয়া ও তুরস্কে অবস্থার করা শরণার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, বলেছেন তিনি।সিরিয়ায় যে পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে তাদের জন্য মসজিদ খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা, ইদলিব ও তারতৌসে অন্তত ৮১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।বিরোধী অধ্যুষিত উত্তরপশ্চিমে অন্তত এক হাজার ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে; এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যেতে পারে, বলেছেন হোয়াইট হেলমেটসের উদ্ধারকারীরা।“আমাদের দলগুলো ব্যাপক চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা ধ্বংসসযজ্ঞ আর বিপুল সংখ্যক ধসে পড়া ভবনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না,” বলেছেন হোয়াইট হেলমেটসের প্রধান রাদ আল-সালাহ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য