স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ১৩জানুয়ারি: ব্রাজিলের নিরাপত্তা বাহিনী থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর কট্টর সমর্থকদের বাদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুয়িজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা। রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোতে সরকারবিরোধী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে তাণ্ডব চালাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সহযোগিতা করেছে বলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন তিনি।লুলার জ্যেষ্ঠ সহযোগীরা বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর যারা ওই ঘটনায় সহযোগিতা করেছেন তাদের শনাক্ত করে বাদ দেওয়ার কাজটি জটিল হবে।কিন্তু বোলসোনারোর সমর্থকদের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তাণ্ডব চালাতে দেওয়ার জন্য কারা দায়ী তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“মিলিটারি পুলিশের মধ্যে অনেকেই এতে সহযোগিতা করেছে। সশস্ত্র বাহিনীরও অনেকে সহযোগিতা করেছে,” সাংবাদিকদের বলেছেন লুলা।“এই লোকদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিতে প্রাসাদের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল, এটি বিশ্বাস করেছি আমি, কারণ দরজা ভাঙা হয়েছে বলে দেখিনি।”সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের সামনে বোলসোনারোর সমর্থকরা শিবির স্থাপন করে দুই মাস ধরে অবস্থান করার পরও তাদের নিরস্ত করতে বাহিনীটির কিছু না করারও সমালোচনা করেছেন লুলা। এই শিবিরে অবস্থানকারীরা লুলাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সামরিক বাহিনীকে অভ্যুত্থান করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জানানো অনুরোধে সাড়া দেয়নি ব্রাজিলের সেনাবাহিনী।
লুলাকে সরিয়ে বোলসোনারোকে ক্ষমতায় বসাতে সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানানো কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রোববার ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট, কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তারা জানালা, আসবাবপত্র, কম্পিউটার ও শিল্পকর্ম ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।রাজধানীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনী এসব ভবনগুলোর দিকে এগোতে থাকা উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে থামায়নি আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ছবিতে তাদের অনেককে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেলফি তুলতে ও বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথা বলতে দেখা গেছে। লুলা কেন্দ্রীয় সরকারকে স্থানীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়ার পরই শুধু দাঙ্গা পুলিশ সক্রিয় হয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং প্রায় ১৮০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য প্রথমেই যাদের দায়ী করা হয় তাদের মধ্যে বোলসোনারোর মিত্র ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ইবানিস হসা অন্যতম। এই বিশৃঙ্খলার তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকসান্দ্রি জি মোরাইস রোববারই হসাকে বরখাস্ত করেন। মোরাইস ব্রাসিলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান ও পুলিশ প্রধানকেও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের ভাষ্য অনুযায়ী, দাঙ্গাকারীরা ভেতরে ঢুকে ভাংচুর না চালানো পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনা ব্যাটেলিয়ন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরের দায়িত্বরত চার কর্মীকে দ্রুত পরাস্ত করে তাদের কার্যালয়ে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় হামলাকারীরা। দাঙ্গাকারীরা লুলার দপ্তরের দরজায় লাথি মারে কিন্তু ভাঙতে ব্যর্থ হয়।প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কয়েকটি কম্পিউটার নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গোপনীয় তথ্য থাকা হার্ড ড্রাইভগুলো গায়েব হয়ে গেছে। টেইজার গানের বাক্সগুলো খালি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র গুতো গুতেহিস।