Friday, January 24, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদগুগলের চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি আনছে মাইক্রোসফট

গুগলের চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি আনছে মাইক্রোসফট

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,১১ জানুয়ারি: লোকসানের ধারা থেকে বের হতে বিশ্বের অনেক বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান গত বছর থেকে বিনিয়োগে লাগাম টানছে। অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গুগল, মেটা, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান ব্যয়বহুল কাল্পনিক ও খরুচে প্রকল্প থেকে সরে আসছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ের পথেও হাঁটছে। এমন এক পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করেছে মাইক্রোসফট। এখন এটিকেই এখন বলা হচ্ছে মাইক্রোসফটের ‘বাজির ঘোড়া’।২০১৯ সালে মাইক্রোসফট ওপেনএআই নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা ওপেনএআইয়ে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার (৮হাজার ৪৪০ কোটি টাকা—তখনকার প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে) বিনিয়োগ করে। এর মাত্র সাত বছর আগে স্যাম অ্যাল্টম্যান, ইলন মাস্কসহ কয়েকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রথমে কত অর্থ লগ্নি করেছিল, তা প্রকাশ করেনি মাইক্রোসফট। এমআইটি টেক রিভিউ নামের একটি অনলাইন সাইটে ২০২০ সালে বলা হয়, মাইক্রোসফট ওপেনএআইয়ে নগদ অর্থ ও তাদের ক্লাউড ব্যবসা অ্যাজুরের সুবিধা মিলিয়ে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

গত বছরের নভেম্বর থেকেই এই ওপেনএআই বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। এ সময় ব্যবহারবান্ধব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যার বা বট ‘চ্যাটজিপিটি’ উন্মুক্ত করেছে ওপেনএআই। জিপিটি ৩.৫ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের ওপর ভিত্তি করে এই বট তৈরি করা হয়েছে। এই বটের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রকৌশলী থেকে শুরু করে, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, বিনিয়োগকারী—সব মহলে প্রশংসা পাচ্ছে। অবশ্য এখনো চ্যাটজিপিটির মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়েছে। তবে এতে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, চ্যাটজিপিটি এখনই যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও উন্নত। ইতিমধ্যে গুগল তাদের সার্চ ব্যবসায় এই চ্যাটবটকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে।

ওপেনএআই কোম্পানির মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তবে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির মতো সেবা চালুর পর প্রতিষ্ঠানটির মূল্যমান আরও বেড়েছে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তারা এখন আরও তহবিল সংগ্রহ করতে চায়। ইতিমধ্যে আরেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা পিটার থিয়েলের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডার্স ফান্ড এতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাইক্রোসফট শুরুতে যে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছিল, তা লাভ ছাড়াও আরও সুফল বয়ে আনতে পারে।প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ইনফরমেশন বলছে, মাইক্রোসফট তাদের সার্চ ইঞ্জিন বিংয়ের সঙ্গে চ্যাটজিপিটি যুক্ত করতে পারে, যাতে তারা গুগল সার্চের সঙ্গে টক্কর দিতে সক্ষম হবে। এতে দুই দশক পর গুগলের সার্চ ইঞ্জিন প্রথম কোনো বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আগামী বছর ওপেনএআই ১০০ মার্কিন ডলার মুনাফা করবে। এ ছাড়া তারা আগামী বছর এআই সফটওয়্যারের পরবর্তী প্রজন্ম জিপিটি ৪ উন্মুক্ত করবে।মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ডিএ ডেভিডসনের গবেষণা পরিচালক গিল লোরিয়া বলেন, গুগলের ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন মূল্যমানের ক্ষেত্রে গুগল সার্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সার্চ থেকে বার্ষিক ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে গুগল। অন্যদিকে বিং থেকে মাইক্রোসফটের আয় মাত্র ১১ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘ মেয়াদে চ্যাটজিপিটি যুক্ত করলে গুগলকে টক্কর দিতে পারবে বিং।গুঞ্জন রয়েছে, মাইক্রোসফট ওপেনএআই কিনেও নিতে পারে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিষ্ঠান কেনার চেয়ে বিনিয়োগ করলে মাইক্রোসফট তা নিয়ে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে।

গুগলও বসে নেই। ২০১৪ সালে লন্ডনভিত্তিক এআই প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডকে কিনেছে গুগল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কিনে গুগল খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। ব্যয়বহুল এই প্রকল্পে বার্ষিক ৫০ কোটি ডলার লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে এখন নানা হিসাব–নিকাশ করছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকল্পে তাঁরা দেদার অর্থ ঢালছে। তথ্য বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান পিচবুকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৭৮টি চুক্তির মাধ্যমে শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে ১৩৭ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান। গত এক বছরেই গত পাঁচ বছরের বিনিয়োগকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ কমেছে। তাই বলা যায়, মাইক্রোসফটের ‘বাজির ঘোড়া’র দিকে তাকিয়ে বিনিয়োগকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করবে।

চ্যাটজিপিটি

উদীয়মান প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই জিপিটি চ্যাটবট তৈরি করেছে। গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিনা মূল্যে পরীক্ষার জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। চ্যাটবট হচ্ছে সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুসারে মানুষের মতো কথোপকথন বা কাজ চালাতে পারে। ওপেনএআইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্যাম অ্যাল্টম্যান বলেন, এই সফটওয়্যার চালুর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ১০ লাখের বেশি ব্যবহারকারী তা ব্যবহার শুরু করেন।

ওপেনএআই কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের চ্যাটজিপিটি মডেলকে রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং ফ্রম হিউম্যান ফিডব্যাক (আরএলএইচএফ) নামের একটি মেশিন লার্নিং কৌশল ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি সংলাপ অনুকরণ, পাল্টা প্রশ্ন করা, ভুল স্বীকার, এমনকি অনুপযুক্ত অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।বিশ্লেষকেরা বলছেন, চ্যাটজিপিটির মতো একটি সফটওয়্যার দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন আধেয় তৈরি, গ্রাহক পরিষেবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, কোড ডিবাগসহ নানা কাজে এটিকে লাগানো যেতে পারে।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, রয়টার্স ও দ্য ইনফরমেশন

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য