Wednesday, January 22, 2025
বাড়িবিশ্ব সংবাদ‘আফগানিস্তান নারীদের জন্য দেশ নয়, বরং একটি খাঁচা’

‘আফগানিস্তান নারীদের জন্য দেশ নয়, বরং একটি খাঁচা’

স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক,২২ ডিসেম্বর: আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবান ফিরে আসার পর থেকেই দেশটির নারী শিক্ষার্থীরা এমন আদেশ আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন।অবশেষে গত মঙ্গলবার আদেশটি আসে। আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তালেবান।পরদিন গতকাল বুধবার হিজাব পরা আফগান নারী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যান। কিন্তু তালেবান প্রহরীরা তাঁদের ফটকেই আটকে দেন। তাঁদের ফিরিয়ে দেন।আফগানিস্তানে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেছে ১৬ মাস হলো। এই সময়ে দেশটির বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীরা বাদ পড়েছে। এখন তালেবান নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজাও বন্ধ করে দিল।তালেবানের এই সিদ্ধান্তের পর আফগান নারী শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এসব প্রতিক্রিয়া তুলে ধরছেন বিবিসির আলিয়া ফারজান ও ফ্রান্সিস মাও।নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিবিসিকে বলেন, ‘আমাকে আমার ভবিষ্যতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারত যে সেতু (শিক্ষা), সেটিই তারা (তালেবান) ধ্বংস করে দিয়েছে।’ক্ষুব্ধ এই ছাত্রী আরও বলেন, ‘আমি কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি? আমি বিশ্বাস করতাম যে পড়াশোনা করে আমার ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে পারব, আমার জীবনে আলো আনতে পারব। কিন্তু তারা (তালেবান) তা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

তালেবানের সবশেষ এই আদেশ জারির পর দিন দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।দেশটির উত্তরের তাখার, দক্ষিণ-পূর্বের গজনি ও রাজধানী কাবুল থেকে সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, সেখানে মেয়েদের বেসরকারি শিক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান।বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনকার পরিস্থিতিতে আফগান নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।তালেবানের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল কিছু নারী রাজধানী কাবুলের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান। তালেবান কর্মকর্তারা দ্রুত ছোট এই বিক্ষোভগুলো থামিয়ে দেয়। ছত্রভঙ্গ করে দেয়।আফগানিস্তানের নতুন প্রজন্ম ভেবেছিল, তারা ভাগ্যবান। কারণ, তাদের মা, বড় বোন, চাচাতো-মামাতো বোনেরা তালেবানের বিধিনিষেধের জন্য শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা শিক্ষার সুযোগ পাবেন। তবে তারা এখন দেখতে পাচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎও অন্ধকার। তারাও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মুখে।গত বছরের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে বলেছিল, তারা এবার আর আগেরবারের মতো কট্টর পন্থায় দেশ শাসন করবে না। তারা নারী অধিকারকে সম্মান দেখানোর অঙ্গীকার করেছিল।

১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় ক্ষমতায় ছিল তালেবান। তখন দেশটির নারীরা পড়ালেখা করতে পারত না, পারত না চাকরি করতে।মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির নারীরা শিক্ষা ও চাকরির অধিকার ফিরে পেয়েছিল।গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়। বিদেশি সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তালেবানের অভিযানে পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান সরকারের পতন হয়। তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরে আসে। তারা শুরুর দিকে নারীদের স্বল্প স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়েছিল। কিন্তু ধীর ধীরে তা কেড়ে নিচ্ছে তালেবান।মাত্র তিন মাস আগেও আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দেশটির নারীদের অংশ নিতে দিয়েছিল তালেবান। এই পরীক্ষায় হাজারো নারী শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন।

গত নভেম্বরে তালেবান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারী শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় পড়তে পারবেন, আর কোন বিষয় পড়তে পারবেন না, তা নিয়ে বিধি আরোপ করে। নারী শিক্ষার্থীদের অর্থনীতি, প্রকৌশল, সাংবাদিকতার মতো বিষয়ে পড়ায় বাধা দেয় তারা।
নারীদের ব্যাপারে তালেবানের নানা বিধিনিষেধের বিষয়ে দেশটির এক নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরাই কেন সব সময় ভুক্তভোগী হব?’অধিকারকর্মীরা সতর্ক করে বলেছেন, তালেবানের সবশেষ সিদ্ধান্তটি পুরো আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যখন জনসংখ্যার অর্ধেককে আটকে রাখা হয়, তখন সে দেশ উন্নতি করতে পারে না।তালেবান এখনো বৈশ্বিক স্বীকৃতি পায়নি। এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তালেবানকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই শর্তের মধ্যে নারী শিক্ষা অন্যতম। কিন্তু তালেবান নারীশিক্ষা বন্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।দেশটির এক নারী শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে, তালেবান তা কেড়ে নিচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করে তালেবান আফগান নারীদের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।আফগান শিক্ষাবিদ ও অধিকারকর্মী হুমাইরা কাদেরি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তিনি তাঁর দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ‘আফগানিস্তান নারীদের জন্য একটি দেশ নয়, বরং একটি খাঁচা।’

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য