স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২১ অক্টোবর: বাজারের প্রথম বিদ্যুৎচালিত উড়ুক্কু গাড়ি উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছে সিলিকন ভ্যালির স্টার্টআপ কোম্পানি আলেফ অ্যারোনটিক্স।সম্প্রতি নিজেদের প্রোটোটাইপ ‘আলেফ মডেল এ’ দেখিয়েছে এ কোম্পানি। ‘একই সঙ্গে রাস্তায় চলতে এবং আকাশে উড়তে সক্ষম’ এ মডেল ২০২৫ সালে বাজারে আনার উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার কথাও এর নির্মাতারা বলছেন।প্রোটোটাইপ উন্মোচনের সময়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জিম দুখোভনি দাবি করেন, ‘বাজারের প্রথম শতভাগ বিদ্যুৎ চালিত উড়ুক্কু গাড়ি’ হবে মডেল এ; দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ ডলার।একবার পুরা চার্জ নিয়ে ২০০ মাইল চলতে পাবে আলেফ মডেল এ, একটানা উড়তে পারবে ১১০ মাইল। ইতোমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রোটোটাইপ মডেলটির ‘প্রি-অর্ডার’ নেওয়া শুরু করেছে আলেফ অ্যারোনটিক্স।বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান মাতিওর ড্রেপার ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মডেল এ’র প্রথম প্রোটোটাইপ দেখানোর সময়ে নির্মাতারা বলেন, আকাশে ওড়ার জন্য আটটি প্রোপেলার থাকবে গাড়ির ভেতরে।পরিবহন খাতের সঙ্গে বিদ্যুৎচালিত যানের উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ প্রযুক্তি যুক্ত করে নতুন বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছে আলেফ অ্যারোনটিক্সসহ বাজারের বেশ কিছু নতুন প্রতিষ্ঠান; স্বচালনা প্রযুক্তিও গুরুত্ব পাচ্ছে এ খাতে।তবে এর প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জগুলো কোনোভাবেই ছোট নয়। তাছাড়া এ গাড়ি অনুমোদনে নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষকে রাজি করানোও কঠিন কাজ হবে বলে মনে করছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট।এক প্রতিবেদনে তারা লিখেছে, আকাশে ব্যক্তিগত উড়ুক্কু যান আর ড্রোনের ছড়াছড়ি – এমন দৃশ্যপটে নিজেদের করণীয়গুলো নির্ধারণ করতে এখনও হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল এভিয়েশন অথোরিটির (এফএএ) মত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।কিন্তু আলেফ প্রধান দুখোভনির ভাষ্যে, “সব কাল্পনিক ভবিষ্যতের দৃশ্যপটে একই জিনিস উঠে আসে: একটা উড়ুক্কু গাড়ি। আমরা সত্যিই আগামী একশ বছরের জন্য বিশ্বের সকল ট্রাফিক জ্যামের সমাধান করতে পারব।”
‘হাইব্রিড’ নকশা কি নির্ভরযোগ্য?
নকশা অনুযায়ী, আট প্রোপেলারে ভর করে আকাশে উড়বে ব্যাটারি নির্ভর আলেফ মডেল এ। ভেতরের ‘বাবল’-এ দু’জন যাত্রী বহন করতে পারবে এ বাহন।ড্রোন শিল্পর সুবাদে পরিবহন যানের উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন আর অবতরণের প্রযুক্তি নিখুঁত করে নিয়েছেন প্রকৌশলীরা; নিজেদের পরীক্ষামূলক যানেও এ প্রযুক্তি কার্যক্ষমতা যাচাই করে দেখেছে আলেফ।আকারে ছোট প্রোটোটাইপে সাফল্য পেলেও মূল বাহনে এ প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগের বেলায় দেখা দিচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।সিনেট জানিয়েছে, নকশা অনুযায়ী উল্লম্বভাবে উড্ডয়নের পর সামনের দিকে ওড়ার আগে এক পাশে ৯০ ডিগ্রি কাত হয়ে যাবে গাড়ি। আর যাত্রীকে অনুভূমিক বা মাটির সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থায় রাখতে বিপরীত দিকে ঘুরবে গাড়ির ভেতরের বাবল।এ প্রকল্প একদিকে উচ্চাভিলাসী, অন্যদিকে মডেল এ’র মতো বাহনের হাইব্রিড নকশার বিভিন্ন সুবিধা থাকলেও নানা নেতিবাচক দিকও আছে।প্রথমত, রাস্তায় চলার জন্য নকশা করা হয়েছে যে গাড়ির, পরিবহন যান হিসেবে আলেফ এ’র পারফর্মেন্স কখনোই তার সমতুল্য হবে না বলে সিনেটের ধারণা।দ্বিতীয়ত, পুরোদস্তুর উড়ুক্কু যানও নয় আলেফ এ; অর্থাৎ, হেলিকপ্টার বা ড্রোনের সমপর্যায়ের পারফর্মেন্স মিলবে না এ বাহন থেকে।তবে হাল ছাড়তে নারাজ আলেফ অ্যারোনটিক্স। দুটি আলাদা কার্যালয়ে একই সঙ্গে দুটি নকশা নিয়ে কাজ করছে এ কোম্পানি। সিনেট জানিয়েছে, বাহনের গতিও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন এর নির্মাতারা।যাত্রী এবং মালামাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ দুইশ পাউন্ড বহন করতে পারবে আলেফ মডেল এ। পরের সংস্করণগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে বিকল্প হিসেবে ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল’ প্রযুক্তির দিকে নজর দিয়েছেন এর প্রকৌশলীরা।আলেফের উড়ুক্কু গাড়ির ‘হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল’ সংস্করণটি একটানা ৪০০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকৌশলী ওলেগ পেত্রোভ।