Tuesday, April 16, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদলিজ ট্রাসের বিদায়, বরিস জনসন কি ফিরছেন?

লিজ ট্রাসের বিদায়, বরিস জনসন কি ফিরছেন?

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২১ অক্টোবর: ব্রেক্সিটের পর থেকে ঝামেলামুক্ত হতেই পারছে না যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলরা।ব্রেক্সিটের পর ২০১৬ সালে জেমস ক্যামেরন পদত্যাগ করলে প্রধানমন্ত্রী হন টেরিজা মে, ৩ বছর ১২ দিন পর তাকেও বিদায় নিতে হয়েছিল।

এরপর প্রধানমন্ত্রী হন বরিস জনসন; তিনি সাধারণ ভোটেও জেতেন; কিন্তু তাকেও বিদায় নিতে হয় মেয়াদ শেষের আগেই, তিন বছর ৪৫ দিনের মাথায়।আর জনসনের বিদায়ের পর লিজ ট্রাস এসে টিকলেন মাত্র ৪৫ দিন; আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে স্বল্পকালীন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ডও তার হয়ে গেল।টোরি দলে দ্বিধা বিভক্তি চরমে ওঠার মধ্যে বৃহস্পতির সংবাদ সম্মেলনে করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস।ফলে ছয় সপ্তাহের মধ্যে আবারও যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। কারণ ক্ষমতাসীন এই দলের নেতাই হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, যদি না নতুন সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করা হয়।পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার বক্তব্যে লিজ ট্রাস বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে তার দল। ততদিন পর্যন্ত তিনিই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন।১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দাড়িয়ে ট্রাস পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই আলোচনা শুরু হয়, কে হবেন পরের প্রধানমন্ত্রী এবং কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ।তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নতুন সাধারণ নির্বাচনের দাবিও তুলেছে।

যুক্তরাজ্যে কোনো প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদকালের মধ্যে পদত্যাগ ঘোষণা করলে সাধারণ নির্বাচন ডাকা হয় না। বরং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা নতুন নেতা বেছে নেন। আর এই কাজটি করে দলের এমপিদের গঠিত একটি কমিটি, যা ‘১৯২২ ব্যাকবেঞ্চ কমিটি’ হিসেবে পরিচিত।বিবিসি জানিয়েছে, লিজ ট্রাস পদত্যাগ ঘোষণার পরপরই কনজারভেটিভ এমপিদের ‘১৯২২ ব্যাকবেঞ্চ কমিটি’র চেয়ারম্যান স্যার গ্র্যাহাম ব্র্যাডলি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।তিনি জানান, আগামী সপ্তাহের শুক্রবারের মধ্যেই ভোটের মাধ্যমে একজন নতুন দলনেতা বেছে নেওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী।রক্ষণশীল দলের নেতা নির্বাচিত যিনি হবেন, তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য মনোনীত হবেন এবং যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নতুন নেতাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করবেন।এমনটিই হয়েছিল লিজ ট্রাসের বেলায়ও। বরিস জনসনের পদত্যাগের পর দলের নেতৃত্বের লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্বে ঋষি সুনাককে হারিয়ে জিতেছিলেন ৪৭ বছর বয়সী লিজ ট্রাস। এরপর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মৃত্যুর আগে সেটাই ছিল রানির সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ।লিজ যার উত্তরসূরি হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, তার উত্তরসূরি হতে আবার সেই বরিস জনসনের নামও উঠে আসছে আলোচনায়।বিশ্লেষকদের ধারণায় বরিস জনসনই এখন পর্যন্ত রক্ষণশীল দলের সদস্যদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় নেতা। আর এ কারণেই কয়েকজন টোরি এমপি এরইমধ্যে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও জনসনকে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের বাইরে থাকা জনসন প্রধানমন্ত্রী লিজের পদত্যাগের পর দ্রুতই দেশে ফিরছেন।যুক্তরাজ্যের রাজনীতি এখন এমন এক ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যে অনেক কিছুই এখন সম্ভব হয়ে যেতে পারে। ফলে বরিস জনসনের ফিরে আসাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও তিনি আবারও প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।বরিস জনসনের মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ঋষি সুনাকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের বর্তমান নেতা পেনি মরডান্টের নামও আসছে সম্ভাব্য প্রধানন্ত্রীর তালিকায়।

গতবার শীর্ষ তিন প্রার্থীর মধ্যে মরডান্ট ভোটের প্রথম দুই রাউন্ডে শীর্ষে ছিলেন। তৃতীয় রাউন্ডে তিনি ছিটকে যান এবং শেষ পর্যন্ত ঋষি সুনাক ও লিজ ট্রাসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এবারও মরডান্ট প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, ট্রাসের মন্ত্রিসভা থেকে সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস এবং আগেরবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা কেমি বেইডনকের নামও শোনা যাচ্ছে।‘১৯২২ ব্যাকবেঞ্চ কমিটি’র চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম বলেন, তিনি আশা করছেন টোরি এমপিরা সম্মিলিতভাবে একজনকেই নতুন নেতা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। যদিও এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।কোন নিয়মে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন হবে, তা স্যার গ্রাহামের কমিটিই ঠিক করবে। এখন পর্যন্ত শুধু জানা যাচ্ছে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে।যদি একাধিক প্রার্থী থাকে তাহলে নির্বাচন হবে, আর একজন মাত্র প্রার্থী থাকলে তাকেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে; যদিও এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট ক্ষীণ বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টারমার নতুন সাধারণ নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের লেজে-গোবরে পরিস্থিতির মাশুল দিচ্ছে দেশের জনগণ।ওয়েলসের ফার্স্ট মিনিস্টার মার্ক ড্রাকফোর্ড এবং স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেওনও নতুন সাধারণ নির্বাচন ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন।তবে সাড়ে ছয়শ সদস্যের পার্লামেন্টে রক্ষণশীল দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৩৫৭ এমপি) তারাই সিদ্ধান্ত নেবে সাধারণ নির্বাচন হবে কি না? তারা যদি না চায় তাহলে যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালের আগে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা এখন দেখা যাচ্ছে না।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য