Friday, March 29, 2024
বাড়িবিশ্ব সংবাদহিজাব ছাড়াই ইরানি তরুণীর শৈলারোহণ: বিক্ষোভে ‘একাত্মতা’ নাকি ‘অসাবধানতা’

হিজাব ছাড়াই ইরানি তরুণীর শৈলারোহণ: বিক্ষোভে ‘একাত্মতা’ নাকি ‘অসাবধানতা’

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা,২০ অক্টোবর: দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি শৈলারোহণ (রক ক্লাইম্বিং) প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়াই অংশ নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ইরানের তরুণী এলনাজ রেকাবি। দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনাও পেয়েছেন তিনি।হিজাব না পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রেকাবি ইরানের পোশাকবিধি ভেঙেছেন। কিন্তু পরে তিনি বলেছেন, ইচ্ছা করে নয় বরং ‘অসাবধানতাবশত’ হিজাব ছাড়া পড়ে গিয়েছিল।ইন্সটাগ্রাম পোস্টে এবং বিমানবন্দরে এক টিভি সাক্ষাৎকারে রেকাবি হিজাব না পরা নিয়ে এমন কারণ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার এমন কথা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের চোখে রেকাবি এই বিক্ষোভের এক নতুন প্রতীক। এই তরুণী হিজাব পরার নিয়ম ভেঙে বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বলেই তারা মনে করে। কিন্তু অসাবধানতার যে ব্যাখ্যা রেকাবি দিয়েছেন, সেটি ইরান সরকারের চাপে পড়েই তিনি বলেছেন বলে বিশ্বাস অনেকের।তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে গত মাস থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে ইরান। হিজাব ঠিকমত না পরার অভিযোগ তুলে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাশাকে আটক করা হয়। মাশার পরিবারের দাবি, পুলিশি নির্যাতনে মাশা কোমায় চলে যান এবং হাসপাতালে তিনদিন কোমায় থাকার পর তার মৃত্যু হয়।মাশার দাফনের দিন প্রথমে তার শহরে এবং সেখান থেকে পুরো ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজের সব স্তরের নারীদের এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণ উল্লেখ করার মত। নারীরা মাথা থেকে হিজাব খুলে এবং কেউ কেউ হিজাব পুড়িয়ে দিয়ে ইরান সরকারের কঠোর পোশাকবিধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।বিক্ষোভ দমনে ইরান সরকার কঠোর হয়েছে। যার জেরে এখন পর্যন্ত শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।ইরানে নারীদের হিজাব দিয়ে মাথার চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। সেই সঙ্গে ঢিলেঢালা পোশাকে তাদের পুরো শরীর ঢেকে রাখতে হয়। এমনকি ‍নারী খেলোয়াড় যারা দেশে এবং আন্তর্জাতিক ‍অঙ্গনে ইরানের প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের জন্যও এই পোশাক বিধি মানা বাধ্যতামূলক।‘রক ক্লাইমবার’ ৩৩ বছরের এলনাজ রেকাবি গত ১৬ অক্টোবর আয়োজিত আইএফএসসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হিজাবে মাথা না ঢেকেই প্রতিযোগিতার অংশ নেন।তার হিজাব না পরা সেই ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। রেকাবি বুধবার সকালে ইরানে ফিরতেই তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে বাসিন্দারা। তাকে ‘হিরোইন’ তকমা দেওয়া হয়। রেকাবিকে অভ্যর্থনা জানাতে ভোররাত থেকেই বিমানবন্দরের সামনে ভিড় করেছিল তার পরিবারের সদস্যরাসহ বহু মানুষ।রেকাবি কালো বাস্কেটবল ক্যাপ ও হুডি দিয়ে নিজের মাথা ঢেকে রেখেছিলেন। তাকে দেখেই সবাই আনন্দে মেতে ওঠে, ভরিয়ে দেয় শুভেচ্ছায়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেখানকার কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে বিমানবন্দরের বাইরে শত শত মানুষকে হাততালি দিতে এবং ‘এলনাজ একজন হিরোইন’ বলে চিৎকার করতে শোনা গেছে।কিন্তু এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্যে রেকাবি তার অসাবধানতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। তাতে রেকাবি বলেন, ‘‘আমি নারীদের লকার রুমে ছিলাম। সেখানে হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আমার ডাক পড়ে।‘‘আমি জুতা পরা এবং আমার ‍অন্যান্য সরঞ্জাম ঠিকঠাক করতে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে হিজাব পরতে ভুলে যাই। যেটা আমার পরা উচিত ছিল।” চুল পনিটেল করে বাঁধা অবস্থায় তার খেলায় অংশগ্রহণের ভিডিও নিয়ে ‘মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হয়েছে এবং সেটি নিয়ে তিনি ‘দুঃশ্চিন্তা ও চাপ অনুভব করছেন’ বলেও জানান।তিনি বলেন, ‘‘আমি যে সুস্থভাবে এবং নিরাপদে ইরানে ফিরে আসতে পেরেছি এজন্য খোদাকে ধন্যবাদ। আমাকে ঘিরে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় আমি ইরানের জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’’রেকাবির সঙ্গে তার পরিবার যোগাযোগ করতে পারছে না এবং তিনি পূর্বপরিকল্পিত সময়ের আগে ইরান ফিরতে বাধ্য হয়েছেন এমন কিছু খবর ছড়িয়েছে- যা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন রেকাবি। তিনি বলেন, ‘‘এমন কিছু ঘটেনি। আমরা পরিকল্পনামাফিকই ইরানে ফিরে এসেছি।”মঙ্গলবার বিকালে রেকাবির ইন্সটাগ্রামে এমন ধরনের কিছু মন্তব্য পোস্ট হওয়ার পর বিবিসি’র পারসিয়ান সার্ভিসের এক সাংবাদিক বলেছেন, এমন সব ভাষায় কথা বলাকে অনেকে চাপের মুখে করা মন্তব্য বলেই ভাবে।অতীতেও বিদেশে যেসব ইরানি নারী খেলোয়াড়রা হিজাব না পরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তারা বলেছেন, ইরান কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে তাদেরকে রেকাবির মতো একইভাবে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। ওইসব নারীদের কেউ কেউ ইরানে না ফেরারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।ইরানে যুক্তরাষট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, “রেকাবি তার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েছেন এবং তখন থেকেই তিনি তার অসহযোগের সহাসী পদক্ষেপ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রচণ্ড চাপের মুখে আছেন।”

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য