স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ০৭ ফেব্রুয়ারি : ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।’ এই ছড়াটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন বাঙালি খুঁজে মেলা ভার। এই বিখ্যাত ছড়াটির পাশাপাশি আরও অসংখ্য ছড়া লিখে পাঠকের চিত্ত জয় করেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রয়াত হলেন সেই বিখ্যাত ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার । বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
প্রধানত ছোটদের জন্যই লিখতেন তিনি। কিন্তু মজার মজার লেখনীতে সকলকে মুগ্ধ করার পাশাপাশি ভবানীপ্রসাদের লেখায় থাকত সামাজিক স্যাটায়ার। ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সারা জীবনে লিখেছেন কুড়ি হাজারের বেশি ছড়া। করেছেন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ‘মজার ছড়া’, ‘সোনালী ছড়া’, ‘কোলকাতা তোর খোল খাতা’, ‘হাওড়া-ভরা হরেক ছড়া’, ‘ডাইনোছড়া’র মতো একাধিক বই লিখেছেন তিনি। সত্যজিৎ রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখেছেন ‘ছড়ায় ছড়ায় সত্যজিৎ’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ নইলে অনাথ’।
১৯৫৩ সালের ৯ এপ্রিল হাওড়ার জগাছা থানার অন্তর্গত দাশনগরের কাছে দক্ষিণ শানপুর গ্রামে জন্ম ভবানীপ্রসাদের। বাবা নারায়ণচন্দ্র মজুমদার ও মা নিরুপমা দেবী। পেশায় ছিলেন শিক্ষক। পড়াতেন শানপুরের কালিতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে এই বিদ্যালয়েরই প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। আর সেই সঙ্গেই চালিয়ে গিয়েছেন লেখালেখি। সেজন্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। এছাড়াও পেয়েছেন ‘শিশুসাহিত্য পরিষদ পুরস্কার’, ‘অভিজ্ঞান স্মারক’, ‘ছড়া সাহিত্য পুরস্কার’-সহ একশোর বেশি পুরস্কার।
অসংখ্য লেখার মধ্যে থেকে আলাদা ভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর বিখ্যাত দুটি ছড়া ‘আ-মরি বাংলাভাষা’ ও ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’। সেই অর্থে ছড়ার পাঠক নন যাঁরা, তাঁরাও কমবেশি পরিচিত এই ছড়াগুলির সঙ্গে। বিশেষত দ্বিতীয়টি। ইংরাজি মাধ্যমের পড়ুয়াদের বাংলা ভাষা শেখানোর বিষয়ে অভিভাবকদের অবহেলার যে বাস্তব চিত্র তিনি তুলে ধরেছিলেন তা আপাত ভাবে মজার আড়ালে ব্যঙ্গের সপাট চাবুক হয়ে আছড়ে পড়েছিল বাঙালির মননে। এই ছড়া কেউই ভুলতে পারবে না।