স্যন্দন ডিজিটেল ডেস্ক, ২৪ জানুয়ারি : মার্টিন স্করসিসির ‘কিলার্স অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ অস্কারে ১০টি চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে। কিন্তু তালিকায় নেই ছবির প্রধান চরিত্রাভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর নাম। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ লিওর ভক্তকুল। কিন্তু তাঁরা বিস্মিত নন। কেননা, এমনটা এই প্রথম হল তা নয়। অস্কারের সঙ্গে ৪৯ বছরের অভিনেতার যেন অদ্ভুত এক ‘লাভ-হেট’ রিলেশন!
এটা নিয়ে কোনও বিতর্কও হবে না যে লিও বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সেলেব্রিটি অভিনেতা। অথচ এযাবৎ তিনি একবারই অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৬ সালে ‘দ্য রেভারেন্ট’ ছবির জন্য। এছাড়া বার পাঁচেক পেয়েছেন মনোনয়ন। কিন্তু বাদবাকি সময়ে অসংখ্য ভালো ছবিতে দাপিয়ে অভিনয় করেও পুরস্কার দূরে থাক, মনোনয়ন পর্যন্ত পাননি। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন স্করসিসির বহুল প্রশংসিত ছবি। তাই সিনেপ্রেমীরা চূড়ান্ত হতাশ।
অথচ কিশোর বয়সেই অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন লিও! সেটা ১৯৯৪ সাল। আগের বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হোয়াট ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’ ছবিতে মানসিক ভাবে অসুস্থ কিশোরের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘টাইটানিক’ ছবি থেকে শুরু হল তাঁর অস্কার-দুর্ভাগ্য। জ্যাক নামের সোনালি চুলের এক শিল্পীর ভূমিকায় গোটা দুনিয়ার হৃদয় জয় করেছিলেন লিও। অথচ দেখা গেল ছবিটি পেয়েছে ১৪টি মনোনয়ন। যার মধ্যে ১১টিতেই জয়। সর্বকালীন রেকর্ড। অথচ লিও মনোনয়নটুকুও পেলেন না। হতাশায় সেবারের অস্কারের অনুষ্ঠানেই যাননি তিনি।
সেই শুরু। ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’, ‘গ্যাংস অফ নিউ ইয়র্ক’, ‘দ্য ডিপার্টেড’, ‘রেভলিউশনারি রোড’ বহু ছবিতেই তাঁর মনোনয়ন ঘিরে জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত লিও কোনওটিতেই নমিনেশন পাননি। ১৯৯৪ সালের পর একেবারে ২০০৫। ‘দ্য এভিয়েটর’ ছবির জন্য মনোনয়ন মিলল। বছর দুয়েক পর ২০০৭ সালে ‘দ্য ব্লাড ডায়মন্ড’ ছবিতে মনোনয়ন। এর পর দীর্ঘ ছেদ। ২০১৪ সালে ‘দ্য উলফ অফ ওয়াল স্ট্রিট’ এবং ২০২০ সালে ‘ওয়ান্স আপ অন আ টাইম ইন হলিউড’ ছবির জন্য মনোনয়ন এলেও ২০১৬ সালে এসেছিল মাহেন্দ্রক্ষণ। অস্কার ওই একবারই উঠেছিল লিওর হাতে। তার আগে পরে কয়েকটা মনোনয়ন। প্রায় তিন দশক ধরে অটুট জনপ্রিয়তা। অথচ অস্কার এর বেশি স্বীকৃতি লিওকে দিল কই?
এবার আশা জাগছিল ‘কিলার্স অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন’কে ঘিরে। ছবিতে এমন এক চরিত্রকে ফুটিয়েছেন যা একেবারেই অ্যান্টি হিরোর। আর সেই চরিত্রটি গড়ে তুলতে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন লিও। কিন্তু তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গেল এবারও বাদ রুপোলি পর্দার ‘জ্যাক’। কেরিয়ারের এই পর্যায়ে এসেও এমন অবহেলা কি সত্যিই প্রাপ্য জ্যাকের? অনুরাগীরা বলছেন, এতে কীই বা এসে যায়? লিওনার্দো এমন একজন অভিনেতা, যাঁর কোনও পুরস্কার কিংবা মনোনয়নের আর দরকার নেই। এত বছর ধরে যে ভালোবাসা তিনি পেয়ে এসেছেন, তার চেয়ে বড় পুরস্কার এমনকী অস্কারও নয়। একজন শিল্পী বোধহয় শেষপর্যন্ত এই স্বীকৃতিই চান। সেদিক থেকে দেখলে লিওর ভাগ্য তাঁকে সম্পূর্ণ সঙ্গ দিয়েছে। নাই বা তিনি উঠলেন অস্কার মঞ্চে, বিশ্বের চলচ্চিত্র মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি এত বছর পরও একই রকম উজ্জ্বল। এই পুরস্কার কজন পায়?