Saturday, August 16, 2025
বাড়িরাজ্যঅশ্রু জলে শেষ বিদায় বীর শহিদ দুই জওয়ানকে

অশ্রু জলে শেষ বিদায় বীর শহিদ দুই জওয়ানকে

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৩ জুলাই : শনিবার মনিপুর থেকে একের পর এক ফোন রাজ্যে ভেসে আসতেই শোক স্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা রাজ্য। আর্মি অফিসার বিশালগড় মহকুমা স্থিত বাইদ্যাদিঘি সঞ্জয় দেবনাথের বাড়িতে ফোন করে তার বাবাকে জানান সঞ্জয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। খবরটি মানিয়ে নেওয়া ছিল খুব অত্যন্ত কঠিন, কিন্তু মানিয়ে নেওয়াটাই স্বাভাবিক। এদিকে দুপুরের নাগাদ কল্যানপুরে বীর জওয়ান প্রশান্ত দেবের পরিবারের কাছে ফোন আসে, এই বীর জওয়ানেরও মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।

 দুটি খবরে রাজ্যে এসে পৌঁছাতেই মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার-পরিজন। শুরু হয় দুই বীর শহীদ জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ রাজ্যে আসার অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত জানা যায় মৃতদেহ শনিবার আনা হবে না। রবিবারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুই শহীদ জওয়ানের পরিবারে অবুঝ শিশু থেকে শুরু করে স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মা, বাবা যেন আর অপেক্ষা করতে পারছিলেন না। কেউ শেষবারের মতো বাবাকে দেখার অপেক্ষায়, আবার কেউ স্বামীকে শেষবারের মতো দেখার ইচ্ছা, কিন্তু বাকরুদ্ধ মা-বাবা। দেশের জন্য শহীদ হয়েছে ছেলে। একদিকে যেমন গর্বের বিষয়, অপরদিকে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা ছিল সবচেয়ে বড় কঠিন কাজ। যা বলে বোঝানোর মত সাধ্য হয়তো ছেলে হারা বৃদ্ধ মা বাবার কাছে ছিল না। কিন্তু ভাগ্যের যে নির্মম পরিহাস মেনে নেওয়াটা স্বাভাবিক।

যথারিতি রবিবার সকাল থেকে বিমানবন্দরে ভিড় করতে থাকে দুই জোয়ানের পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। দুপুরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কে ডি – ৭১৪ বিমানে নিয়ে আসা হয় দুটি কফিন বন্দী দেহ। বিমানবন্দর থেকে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় আসাম রাইফেলস ময়দানে

জানা গেছে জিরিবাম থেকে ইম্ফল পর্যন্ত একটি নির্মীয়মাণ রেললাইনের নিরাপত্তার জন্য টুপুল রেলওয়ে স্টেশনের কাছে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। ধ্বসে ভেসে যায় তাঁদের সেই সেনা-ক্যাম্প। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। যাঁদের মধ্যে ১৮ জন টেরিটোরিয়াল আর্মির জওয়ান। প্রায় ৫৫ জন এখনও ধ্বংসস্তুপে আটকে রয়েছেন। উদ্ধারের কাজে ইতিমধ্যেই সেনা নামানো হয়েছে। রবিবার রাজ্যের দুই বীর সন্তানের কফিনবন্দী মরদেহ নিয়ে আসা হয় এম বি বি বিমান বন্দরে। সেখান থেকে দুই বীর জওয়ানের মতদেহ নিয়ে শুরু হয় অন্তিম যাত্রা। শেষ যাত্রায় সামিল হয় অগণিত মানুষ। তেরঙ্গা পতাকা আর ভারত মাতার শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজপথ। বিমানবন্দর থেকে যত এগিয়েছে শেষ যাত্রা ততই রাস্তার দুধারে দাড়িয়ে থাকা সাধারন মানুষ ভীড় বেড়েছে। সকলেই শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য সমবেত হন। বিমান বন্দর থেকে দুই বীর জওয়ানের মরদেহ এসে পৌছুয় আসাম রাইফেলস ময়দানে। সেখানে দুই বীর শহীদ সঞ্জয় দেবনাথ ও প্রশান্ত দেবকে গার্ড অফ ওনার প্রদান করা হয় । শেষ শ্রদ্ধা জানান আসাম রাইফেলস বাহিনীর আধিকারিকেরা।

আসাম রাইফেলস ময়দানে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর ফের কফিন বন্দী দুই বীর জওয়ানের মরদেহ বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার পরিজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

এদিকে বীর সেনা সঞ্জয় দেবনাথের নিথর দেহ বাড়িতে পৌছাতেই কান্নার রোল ভেঙে পড়ে। সঞ্জয় ২৯ জুন ছুটিতে বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরল সঞ্জয়ের কফিনবন্দী দেহ। আর মাত্র সাত মাস পর সঞ্জয় চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা। কারণ দীর্ঘ ২০ বছর দেশ সেবায় নিয়োজিত ছিলেন সঞ্জয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। প্রাকৃতিক দুর্যোগে শহীদ হলেন সঞ্জয়। রাজ্যের বীর সন্তান সঞ্জয় দেবনাথ ,  প্রশান্ত দেব দায়িত্ব প্রতিপালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তাদের এই আত্মত্যাগ দীর্ঘ মনে রাখবে রাজ্যের মানুষ।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য

error: <b>Alert: </b>Content selection is disabled!!