Friday, November 22, 2024
বাড়িপ্রযুক্তিনাম পাল্টে ‘মেটা’ হলো ফেইসবুক

নাম পাল্টে ‘মেটা’ হলো ফেইসবুক

স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২৯ অক্টোবর : প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্যোগের মধ্যে নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেন ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। সকল সেবা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘মেটা’ নামে পরিচিত হবে। তবে মূল সামাজিক মাধ্যমটির নাম ফেইসবুকই থাকছে।

নতুন এই নামটি প্রতিষ্ঠানটির নতুন উদ্যোগ ‘মেটাভার্সে’র দিকেই ইঙ্গিত করে। ভার্চুয়াল জগত এবং হার্ডওয়্যারের সমন্ময়ে নতুন ধারার এক কর্মক্ষেত্র তৈরির পেছনে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ইঙ্গিত প্রতিষ্ঠান প্রধান মার্ক জাকারবার্গ আগেই দিয়েছিলেন।

সিইও জাকারবার্গ কোম্পানির বার্ষিক হার্ডওয়্যার ইভেন্ট ‘কানেক্টে’ বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন। বার্ষিক এ আয়োজনে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত পোর্টাল ভিডিও ডিভাইস এবং অকুলাস হেডসেটের মতো পণ্য সম্পর্কেই কথা বলে।

“এখন থেকে, আমরা প্রথমে মেটাভার্স হতে যাচ্ছি। প্রথমে ফেইসবুক নয়”– কানেক্ট ইভেন্টে নিজের মূল বক্তব্যে বলেন জাকারবার্গ। “ফেইসবুক বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত পণ্যের মধ্যে একটি। কিন্তু এই মুহুর্তে, আমাদের ব্র্যান্ডটি একটি পণ্যের সাথে এতটাই নিবিড়ভাবে জুড়ে আছে যে আমরা যা কিছু করছি তার সবকিছুকে এটি ধারণ করতে পারে না।”

ফেইসবুকের সামাজিক মাধ্যম কেন্দ্রিক ব্যবসা যে বিবিধ সামাজিক ক্ষতির পেছনে মূল ভূমিকা রাখছে, নতুন নামকরণ সাম্প্রতিক সেই উন্মোচন থেকে মনোযোগ সরানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেইসবুক এরইমধ্যে এমন আইনী প্রশ্নের মুখামুখি দাঁড়িয়েছে যার সন্তোষজনক জবাব ফেইসবুকের পক্ষে দেওয়া সম্ভবত কঠিন হবে।

https://d6082f712a3902475f35ffe3046f1ba0.safeframe.googlesyndication.com/safeframe/1-0-38/html/container.html সম্প্রতি জনসমক্ষে এসেছেন ফেইসবুকের তথ্য ফাঁসকারী একাধিক সাবেক কর্মী, ফাঁস করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ অভ্যন্তরীণ নথিপত্র আর গবেষণা প্রতিবেদন।

ফেইসবুক কীভাবে বিভিন্ন দেশে সামাজিক মেরুকরণের পেছনে পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে, সাধারণ ব্যবহারকারীর কীভাবে ভুয়া আর মিথ্যাচারের জালে আটকা পড়ছেন এবং উগ্র রাজনৈতিক সমর্থকদের থামাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতা কীভাবে ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল সহিংসতায় ভূমিকা রেখেছে– সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে ওই সাবেক কর্মীর ফাঁস করা নথিপত্রে।

ফাঁস হওয়া নথিপত্রের প্রতিক্রিয়ায় ফেইসবুক এবং পুরো প্রযুক্তি শিল্পের উপর নতুন কড়াকড়ি আরোপের হুমকি দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতারা। ফেইসবুক কখন কতোটুকু জানতো– সেই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যও দাবি করছেন তারা।

তবে ফেইসবুক বলছে, ওই ‘ফেইসবুক পেপার্স’ আদতে “ফাঁস হওয়া নথি নির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা চিত্রায়নের সমন্বিত চেষ্টা”।

মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অভ্যন্তরীণ নথিপত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগেই এই পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছিলো ফেইসবুক। জাকারবার্গ তার সহকর্মীদের আগেই জানিয়েছিলেন যে, ওয়াশিংটনসহ অন্যত্র সকল প্রতিষ্ঠানিক মাথা ব্যথার মোকাবেলাকারী একমাত্র আর হতে চান না; ফেইসবুককে ‘মেটাভার্স’-এ রূপান্তরেই মনোনিবেশ করতে চান তিনি।

১৭ বছর আগে একটি কলেজ ডর্ম রুমে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ফেইসবুকের। কিন্তু ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার সেবা মিলিয়ে প্রযুক্তি সেবার বাজারের একটা বড় অংশ এখন ফেইসবুকের দখলে। হার্ডওয়্যার ও অনলাইন লেনদেন সেবানির্ভর ব্যবসা এখনও আঁতুর ঘড়ে থাকলেও এই খাতেও এগোচ্ছে ফেইসবুক। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরাসহ প্রযুক্তিখাতের সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে নাম পরিবর্তনের সময় এসেছে মূল প্রতিষ্ঠানের।

সিলিকন ভ্যালির প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম পাল্টাচ্ছে না ফেইসবুক। ২০১৫ সালে মূল প্রতিষ্ঠানে নাম পাল্টে অ্যালফাবেট করেছিল ‍গুগল। নিজেদের ক্যামেরা কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে স্ন্যাপচ্যাট নাম পাল্টে হয়েছে স্ন্যাপ ইনকর্পোরেটেড।

তারও আগে বাজারে আইপড এবং আইফোন আনার পরপরই ২০০৭ সালে সে সময়ের অ্যাপল কম্পিউটার্স নাম পাল্টে অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড রেখেছিল।

চলতি বছরেই জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘মেটাভার্স’ নামে পরিচিত হবে। এরপর রে-ব্যানের সঙ্গে জোট বেঁধে স্মার্ট-গ্লাস উন্মোচন করে পেশাদারি কাজে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেটের পরিকল্পনার ঘোষণা দেন জাকারবার্গ। দীর্ঘ দিনের পুরনো বন্ধু অ্যান্ড্রু বসওর্থকে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নতুন চিফ টেকনোলজি অফিসার বানিয়েছেন তিনি।

পরবর্তীতে, ইউরোপের বাজারে ‘মেটাভার্স সংশ্লিষ্ট’ পদে ১০ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ফেইসবুক। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় হার্ডওয়্যার বিভাগ নিয়ে ভবিষ্যত প্রতিবেদনে আলাদা লাইন হিসেবে যোগ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাকারবার্গ; এই খাতে বিনিয়োগের ফলে ২০২০ সালের মুনাফা এক হাজার কোটি ডলার খরচ হবে বলে জানান তিনি।

সম্পরকিত প্রবন্ধ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে
Captcha verification failed!
CAPTCHA user score failed. Please contact us!

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য