স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ২১ নভেম্বর : অবশেষে লাগাতার সংবাদের জেরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত করতে বৃহস্পতিবার কৈলাসহরের ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করতে যান মন্ত্রী টিংকু রায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দপ্তর ও পূর্ত দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। উল্লেখ্য, কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকা স্থিত ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরেই একেবারেই তলানিতে চলে পৌঁছেছে। বিশেষ করে, জেলা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সিটি স্ক্যান পরিসেবা, অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিষেবা এবং জেনেরিক কাউন্টার দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাছাড়া জেলা হাসপাতালে প্রায় সময়েই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে জেলা হাসপাতালের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলাবাসী।
তাছাড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীদের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে এ.সি মেশিন বসানো হলেও দীর্ঘদিন ধরে জেলা হাসপাতালের এ.সি মেশিন গুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে। এছাড়াও জেলা হাসপাতালের সবকয়টি শৌচাগার নষ্ট হয়ে থাকায় রোগীরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে না দীর্ঘদিন ধরে। গোটা জেলা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে পানীয়জলের অভাব রয়েছে। জেলা হাসপাতালে পানীয়জলের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, কৈলাসহর মহকুমায় যেদিন থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবার দায়িত্ব সাই কম্পিউটার সংস্থার কাছে চলে যায় সেদিন থেকেই অর্থাৎ ২০১৮সাল থেকেই কৈলাসহরের ভগবান নগর এলাকায় অবস্থিত ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের বিদ্যুতের সমস্যা বেড়ে গেছে। প্রায় দিনই জেলা হাসপাতালে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
বিদ্যুৎ না থাকার ফলে গোটা জেলা হাসপাতালের পরিসেবা একেবারেই স্তব্ধ হয়ে যায়।জেলা হাসপাতালে বড় জেনারেটর থাকলেও সেটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে রয়েছে। এর চেয়েও আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো, জেলা হাসপাতালে বিগত এক বছর পূর্বে আই.সি.ইউ নির্মান সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত জেলা হাসপাতালের আই.সি.ইউ চালু করা হয়নি। জেলা হাসপাতালের এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গোটা ঊনকোটি জেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা হাসপাতালের এসব সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে লাগাতার খবর প্রকাশের পর অবশেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের টনক নড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একুশ নভেম্বর বৃহস্পতিবার মন্ত্রী টিংকু রায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দপ্তর সহ পূর্ত দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে এসে প্রথমে জেলা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডক্টর রোহন পাল সহ জেলা হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসকদের সাথে এবং স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকদের এক বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে জেলা হাসপাতালের সমস্ত কিছু সরজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মন্ত্রীর সাথে ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরন গিত্যে, অধিকর্তা ডক্টর সঞ্জীব দেববর্মা, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা, কৈলাসহরের মহকুমাশাসক প্রদীপ সরকার, পূর্ত দপ্তরের ঊনকোটি জেলার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ রঞ্জন দাস সহ এন.এইচ.এম এবং পূর্ত দপ্তরের রাজ্যের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। জেলা হাসপাতালে দীর্ঘক্ষন বৈঠক করার পর দিনভর জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী টিংকু সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানান, জেলা হাসপাতালের সার্বিক পরিকাঠামো খুব শীঘ্রই পরিবর্তন করা হবে। জেলা হাসপাতালে যেসব পরিসেবা বন্ধ রয়েছে তার মধ্যে বিশেষকরে সিটি স্ক্যান পরিষেবা, অক্সিজেন প্ল্যান্ট খুব শীঘ্রই চালু করা হবে। তাছাড়া জেলা হাসপাতালে খুব শীঘ্রই বেশকিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো হবে। জেলা হাসপাতালের জেনেরিক মেডিসিন কাউন্টারও খুব শীঘ্রই চালু করা হবে বলে মন্ত্রী দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তাছাড়া কৈলাসহরের মূল শহর এলাকায় অবস্থিত রাজীব গান্ধী মেমোরিয়াল মহকুমা হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন যে, জেলা হাসপাতালের পূর্বে রাজীব গান্ধী মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নততর করা হবে এবং সেখানে কয়েকদিনের মধ্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানো হবে বলেও নিশ্চিত করেন।