স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ নভেম্বর : পাচার বাণিজ্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিশালগড় ও সোনামুড়া মহকুমায়। পুরনো মারুতি গাড়ি ব্যবহার করে দিনে হাজার হাজার চিনির বস্তা পাচার হচ্ছে সীমান্তের ওপারে। বেআইনিভাবে চিনি পাচার নিয়ে কোন রকম টু শব্দও নেই থানা বাবুদের। বিএসএফ, পুলিশ এবং পাচারকারীদের সামঝোতায় চলছে এ ধরনের বেআইনি পাচার।
আর এর মাসোয়ারা পাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পুলিশ এবং বিএসএফ। তাদের বেতন ভাতা থেকে ২ নম্বরই মাসোয়ারা তিনগুন। তাই দিনরাত ২৪ ঘন্টা চিনির পাচার প্রকাশ চলছে মারুতি গাড়ি দিয়ে। অভিযোগ, বিশালগড় নিচের বাজারের অগণিত গোডাউনে পৌঁছায় হাজার হাজার চিনির বস্তা। আর সেই গোডাউন থেকে নাম্বার রেজিস্ট্রেশন হীন কয়েকশ মারুতি ভ্যান করে চিনির বস্তাগুলি পৌঁছে যায় বাংলাদেশের সীমান্তে। এমনিতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাইক ও গাড়ির কাগজপত্র দেখে জরিমানা করতে বড্ড মজা পায় পুলিশ বাবুরা।
কিন্তু বিশালগড় কামথানা রোডে চলা এই মারুতি ভ্যানগুলির একটারও বৈধ কাগজ নেই। না আছে রেজিস্ট্রেশন, না আছে ইন্সুরেন্স, না আছে ফিটনেস। তারপরেও পুলিশের নাকের ডগায় একশ কিলোমিটারের গতিতে শুরু রাস্তা দিয়েই চিনির বস্তা নিয়ে সীমান্তে ছুটছে কয়েক শতাধিক ভ্যান গাড়ী। বিশালগড় কামথানা, অরবিন্দনগর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার অনেকেই কোনমতে ২০ – ৩০ হাজার টাকা জোগাড় করে একটি মারুতি ভ্যান গাড়ী কিনে নিচ্ছে। আর কিনেই খুলে ফেলছে গাড়ির পেছনের বসার সিটগুলো। কারণ ঐগুলো খুলে নিলেই একটি মারুতি ভ্যানে জায়গা হয় ২০ টি চিনির বস্তা। প্রতি বস্তা ভাড়া ১০০ টাকা হিসেবে এক ট্রিপে ভাড়া হয় ২০০০ টাকা। আর এমন দিনে পাঁচ থেকে ছয়টি ট্রিপ দিতে পারে প্রতিটি গাড়ি। সেই হিসেবে দিনে কামাই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
সব খরচ বাদ দিয়ে মাসিক প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা কামাই করা যায় একটি মাত্র ২০ হাজার টাকার মারুতি ভ্যান কিনে। মারুতি ওমনি গাড়ি তার জীবনের ইনিহাসে এতটা কামাই দিতে পারেনি তার মালিকদের। ২০২৩ – ২৪ সালে এসে বিশালগড় কামথানা রোডে সেই মাইলস্টোন ছুঁল মারুতি কোম্পানির এই ঐতিহাসিক গাড়িটি। কোম্পানির মালিকের কাছে এই খবরটি পৌঁছানো সম্ভব হলে হয়তো তিনি নিজে এসে ঘুরে যেতেন বিশালগড় কামথানা রোডের মারুতি ওমনির স্বর্ণযুগ। পুলিশ, প্রশাসন, সরকার কেউই চাইছে না অবৈধ এই ব্যবসায় লাগাম টানতে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে এই বিষয়টি আছে কিনা, তাও ভাবার বিষয় । মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। অতিসত্বর এই বিষয়ে তদন্তের আদেশ করা দরকার। কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়া গাড়িগুলি কিভাবে রাস্তায় চলছে ? কিভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা চিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে? কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল করে কিভাবে অবাধে এই পাচার বাণিজ্য চলছে ? কেন এতগুলো বিষয়ে আইন ভঙ্গ হবার পরেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ? এর উত্তর কে দেবে? কার দায়বদ্ধতা? কাগজপত্রহীন এই গাড়িগুলোর চাপায় পরে প্রাণ হারালে বা দূর্ঘটনার কবলে পড়লে তার দায়ভার কে নেবে? এই সকল প্রশ্নগুলোর উত্তর কি আছে পুলিশ ও সরকারের কাছে?