স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক। আগরতলা। ৭ এপ্রিল : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পেট্রোল, ডিজেল, ঔষধ পত্র সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা দেশের সাথে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত করে কংগ্রেস। এদিন মিছিলটি শুরু হয় প্রদেশ কংগ্রেস ভবন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন পথ পরিক্রমায় করে। মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি গোপাল রায়, আশীষ সাহা, প্রদেশ কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক সারিতা লাইফ্রাং সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
মিছিলে উপস্থিত প্রদেশ কংগ্রেস পর্যবেক্ষক সারিতা লাইফ্রাং জানান, গত কয়েকদিনে ১৪ বার পেট্রোল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পাল্লা দিয়ে রান্নার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি সারা দেশকে লুট করছে। মানুষ জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যের জন্য তিতি বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই সরকারকে মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করার জন্য বাধ্য করতে কংগ্রেস মাঠে নেমেছে বলে জানান তিনি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের নেতৃত্বে দেশে বিজেপি সরকার জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে চলেছে। এর প্রতিবাদে সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে এদিন দেশের সবকটি রাজ্যের রাজধানীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অঙ্গ হিসেবে আগরতলা শহরেও মেঙ্গাই হাঁটাও, দেশ বাঁচাও স্লোগান নিয়ে মিছিল সংঘটিত করা হচ্ছে। সরকার যদি অবিলম্বে জনগণের স্বার্থে মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার না করে তাহলে আগামী দিনে কংগ্রেস গোটা দেশজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে এদিন হুঁশিয়ারি দেন বীরজিৎ সিনহা।
মিছিলটি বিভিন্ন পথ পরিক্রমার পর জয়নগর বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় আসতেই পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়। সেখানে সুদীপ রায় বর্মন বক্তব্য রেখে বলেন, বিজেপি আজ দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। সরকার শুধু দেশে ধর্ম নিয়ে মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। মানুষ কিভাবে বাঁচবে সেদিকে সরকারের কোনো গুরুত্ব নেই। আবার বলছে কংগ্রেস ৭০ বছরে কি করেছে। কিন্তু কংগ্রেস ৭০ বছরের যা করেছে তা বিক্রি করে দেখাচ্ছে বিজেপি । রেল, বিমানবন্দর, কয়লা সব বিক্রি করে দিচ্ছে বলে জানান সুদীপ রায় বর্মন। জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত এ সরকার। বেকারত্ব নিয়ে রাজনীতি করে। দেশের শিক্ষার অধিকারের আইন, স্বাস্থ্য অধিকারের আইন কংগ্রেসের দেওয়া, আবাসন প্রকল্প কংগ্রেসের দেওয়া, বিদ্যুৎ প্রকল্প কংগ্রেসের দেওয়া, এম জি এন রেগা, খাদ্য অধিকার আইন ইউ পি এ সরকারের দেওয়া। এই সরকারটা এসে শুধু প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করতে ব্যস্ত হয়ে আছে। এছাড়া আর কিছুই করেনি বলে। আট বছরে একটিও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি বিজেপি সরকার জানান তিনি। ভারত ১৪২ টি মাল্টি বিলিয়নের জন্য। কারণ দেশের ৫০ শতাংশ অর্থ সম্পদ তারা বহন করে বলে জানান সুদীপ রায় বর্মন। তিনি আরো বলেন, রাজ্যের যুবকদের মুখ্যমন্ত্রী বিপথে পরিচালনা করতে সমস্ত অসামাজিক কাজ করাতে চাইছেন। যাতে যুবকরা চাকুরীর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতে পারে। নেশার সাম্রাজ্য বানিয়ে রেখেছে। এদিকে দেশের সরকারটা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর পেট্রোপণ্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আকাশ মূল্য করে চলেছে। এর জন্য জাতীয় কংগ্রেস মুখ বুজে থাকতে পারে না। মানুষের মনোভাবকে সম্মান দিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে কংগ্রেস। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ছবিকে সামনে রেখে আচ্ছে দিন আসবে বলে মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারে এসেছে বিজেপি। আর এখন ষ্পষ্ট হচ্ছে দেশে এবং রাজ্যে স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে সরকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানুষের উপর চলছে নিপিরণ অত্যাচার। চাঁদের জন্য জুলুমবাজি করা হচ্ছে। না দিলে মারধর করছে সাধারণ মানুষকে। মানুষ পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করতেও ভয় পাচ্ছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের উপর আক্রমণের ঘটনায় পশ্চিম থানার পুলিশ সাক্ষী রয়েছে। যারা কংগ্রেসের উপর এদিন আক্রমণ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। বরং কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে। এর থেকে বাদ যায় নি মেয়েরাও। কিন্তু মুখ্য গুন্ডারা গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানান সুদীপ রায় বর্মন। নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার জন্য যে স্লোগান তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ নেশার সাথে জড়িত বিজেপির প্রথম সারির একাংশ নেতা। এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে সেই পথেই তারা পরিচালনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তীব্র নিন্দা জানালেন সুদীপ রায় বর্মন।
পরবর্তী সময় রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের কাছে আইন-শৃঙ্খলা চরম অবনতি অভিযোগ তুলে দাবি সনদ তুলে দেয় প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে এদিন উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস পর্যবেক্ষক সারিতা লাইফ্রাং, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, আশীষ কুমার সাহা, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গোপাল রায়, সদর জেলা কংগ্রেস সভাপতি সুব্রত সিংহ। ডেপুটেশনের প্রতিনিধিদল জানান, অবিলম্বে যদি আইন শৃঙ্খলা সঠিক দিশায় না ফিরে আসে তাহলে আগামী দিনে আন্দোলনে নামবে প্রদেশ কংগ্রেস।