স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৩ জুলাই:কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বের হয়ে আসছে সাপ। রাবার প্রকল্পে বড়সড় দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে পড়ছে মন্ত্রীর। এই অভিযোগ তুলেছেন গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান। অভিযোগ, রাবার প্রকল্পে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা। কৈলাসহরের গৌরনগর ব্লকের তিনটি এডিসি ভিলেজ দেওরাছড়া, হীরাছড়া ও ঊনকোটি। সরকারের রাবার ও বাঁশ চাষ প্রকল্পে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বরাদ্দের মধ্যে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপোষণ এবং প্রশাসনিক বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। সমিতিকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে রেখে বেনিফিশিয়ারির তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
যা প্রশাসনিক মহল এবং স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, সাব ডিভিশন ট্রাইবেল ওয়েলফেয়ার অফিসারের উদ্যোগে মোট ২৩৫ হেক্টর জমিতে রাবার প্ল্যান্টেশন প্রকল্পে দেওরাছড়া, হীরাছড়া এবং ঊনকোটি ভিলেজের জন্য ২ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়। পাশাপাশি জোনাল ডেভেলপমেন্ট অফিসারের তত্ত্বাবধানে আরও ৩৭ লক্ষ টাকার প্রকল্প, এবং ডেপুটি ডিরেক্টর, টি.আর.ডিভিশনের অধীনে ৩১ লক্ষ টাকার রাবার ও বাঁশ চাষ প্রকল্প গৃহীত হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, টিআরপিসি প্রকল্পের আওতায় ১৪২ হেক্টর জমির জন্য ১ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার বরাদ্দও গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতি অনুমোদন দিয়েছে, যা পরবর্তীকালে এই অনিয়মের অংশ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু ভয়াবহ সত্য হলো — এই তিনটি ভিলেজে এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রাম কমিটি নেই, নেই ব্লক অ্যাডভাইজরি কমিটিও। নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামসভা বেনিফিশিয়ারি তালিকা তৈরি করে তা পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। অভিযোগ, ত্রিপুরা সরকারের এক মন্ত্রী নিজের পছন্দের লোকজনকে বেআইনিভাবে বেনিফিশিয়ারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পঞ্চায়েত সচিবের স্বাক্ষর নিয়ে ওই তালিকা পাঠিয়েছেন সাব ডিভিশন ট্রাইবেল ওয়েলফেয়ার অফিসারের নিকট, এবং বর্তমানে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে ব্লকের কাছে। এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এইভাবে সমিতিকে না জানিয়ে বেনিফিশিয়ারি ঠিক করা সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর সমান। খোদ মন্ত্রী যদি সরকারের নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করেন তাহলে সাধারণ জনপ্রতিনিধিরা কি করতে পারেন?
কিছু বুঝে উঠার আগেই সমিতির পক্ষ থেকে অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়েছে রাবার প্রকল্পের অনেক কাজ। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে সেখানে স্বজনপোষণ চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের গাফিলতির কথাও তুলে ধরে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়ে বর্তমান জেলা শাসক, পূর্বতন জেলা শাসক, বর্তমান মহকুমা শাসক ও পূর্বতন মহকুমা শাসক — সকলকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই আমি বাধ্য হয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি। এদিকে জলাই গ্রাম পঞ্চায়েতে নদীর পাড় ভাঙন রোধে বৃক্ষরোপণের জন্য ২ লক্ষ ৯ হাজার টাকা ও ঊনকোটি ভিলেজে এগ্রো ফরেস্ট্রি প্রকল্পে ১৫ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকার বরাদ্দ সমিতি অনুমোদন দিলেও এখানেও অনিয়মের গন্ধ পাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই বিডিওর কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন এলাকাবাসী। সকলের দাবি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য।

