স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৫ জুন : ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের ২৫ জুন দেশে জরুরী অবস্থার জারির ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। দেশে জরুরী অবস্থা জারির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বুধবার রাজধানীর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা বলেন দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময় কোথায় কখন কি হবে কেউই বলতে পরে নি। ভয়ে বহু মানুষ ত্রিপুরা ছেড়ে কলকাতায় পালিয়ে যায়। এই জরুরী অবস্থা তৎকালীন সময় মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করে দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী এইদিন কমিউনিস্টদের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন সিপিআইএম মানের জরুরী অবস্থা। দীর্ঘ ৩৫ বছর ত্রিপুরা রাজ্যে সিপিআইএম ক্ষমতায় ছিল।
তাদের সময় সর্বদা বলা হত ভালো মানুষ হতে হবে। তাদের মতে ভালো মানুষ মানে তাদের দলের খাতায় নাম লেখাতে হবে। অন্যথায় ভালো মানুষ হওয়া যায় না। ত্রিপুরা রাজ্যে কংগ্রেস, জোট আমল আর কমিউনিস্টদের শাসন কালে কে কত বেশি খুন করতে পারে তার প্রতিযোগিতা ছিল। সরকার কেমন হয় তা বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্রের রক্ষা কবচ সংবিধান। সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ ভারতের সংবিধান। দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সংবিধান নিয়ে কথা বলার সময় সংবিধানের বইকে মাথায় ঠেকিয়ে কথা বলেন। সংবিধানকে সম্মান জানানোর জন্য এইদিনের অনুষ্ঠান। সংবিধানকে রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে প্রয়াত হয়েছেন। তাদেরকে সম্মান জানানোর জন্য এইদিনের অনুষ্ঠান। নরেন্দ্র মোদীর মতো একজন অভিভাবক পাওয়ায় দেশবাসী ভাগ্যবান। দেশে জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময় আরএসএস ও জনতা পার্টির বহু নেতা কর্মীদের জেলে পুড়ে দেওয়া হয়েছে। বহু সাংবাদিককে সেই সময় জেলে পুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় যারাই প্রতিবাদ করেছিল তাদেরকে জেলে পুড়ে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ মাস ধরে চলে এই জরুরী অবস্থা। তবে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জয় হয় বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন বর্তমানে গণতন্ত্রকে বাঁচানোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন। সংখ্যা লঘু মহিলাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রী সংবিধান মানেন না বলে অভিযোগ করে। কিন্তু জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময় মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছিল। অপরদিকে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন সংবিধান বাঁচানোর জন্য রাহুল গান্ধী বর্তমানে লাল সংবিধান নিয়ে সংসদে প্রবেশ করে। কিন্তু এই সংবিধানে কত গুলি পাতা আছে তাও জানেন না রাহুল গান্ধী। যারা সংবিধান নিয়ে ঘুরে, তারাই দেশের মাতে রাতারাতি জরুরী অবস্থা লাগু করেছে। অপরদিকে সিপিআইএম বিপদে পড়লে সংবিধানের কথা বলে। নকশালদের গুলি করে হত্যা করলে তারা বলে সংবিধান মানা হচ্ছে না। দেশে যুদ্ধ, খরা কিংবা বন্যা হলে তখন জরুরী অবস্থা লাগু করা হয়। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগত কারনে জরুরী অবস্থা লাগু করেছিল। আর কমিউনিস্টরা পার্টির ক্যাডারের জন্য স্থায়ী জরুরী অবস্থা লাগু করে। দেশের মধ্যে ইন্ধিরা গান্ধী ২১ মাস জরুরী অবস্থা লাগু করেছিল। আর ত্রিপুরা রাজ্যে কমিউনিস্টরা ৩৫ বছর জরুরী অবস্থা লাগু করে রেখেছিল। তারা ভারতবর্ষের শুভ চিন্তক নয়। তারা ত্রিপুরা রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি করে নি। তাদের সময় রাজ্যে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপি দেশের মানুষের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করেছে। কংগ্রেসের সময় সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে রাষ্ট্র বিরোধী ও দলের স্বার্থে। যারা নকশাল বাদ ও উগ্রবাদকে সমর্থন করে তারা নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে দেয় না। কোন জাতিকে যদি তার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে, তবে সেই জাতীর কোন অস্তিত্ব থাকে না। ইংরেজ শাসককালে ভারতের ইতিহাসকে পরিবর্তন করার জন্য যা যা করার দরকার তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের শাসন ব্যবস্থা দেশে ছিল ততদিন পর্যন্ত দেশে ইংরেজি ব্যবস্থা কায়েম ছিল। বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর দেশে ভারতীয় করন শুরু হয়। তারপর থেকে দেশের মানুষ দেশের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে শুরু করেছে। এইদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার মানিক সাহা, সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব ছাড়াও আলোচনা করেন সাংসদ কৃতি সিং দেববর্মণ, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান মঞ্চে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য সচিব জে.কে সিনহা, রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশক অনুরাগ ধ্যানকর এবং আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। এইদিনের অনুষ্ঠানে সাধারন মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়।