স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ২৮ মে : গ্রাহক ঠকানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছে সরকার। এর অন্যতম উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর প্রকল্প। এই প্রকল্প সম্পূর্ণ ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। বুধবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এমনটাই অভিযোগ তুললেন প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সরকার দেশের সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা ক্ষেত্রগুলির ন্যায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ক্ষেত্রও আদানি-আম্বানিদের হাতে তুলে দিতে পরিকল্পিতভাবেই এগোচ্ছে। এই লক্ষ্যেই স্মার্ট মিটার, প্রিপেইড বিলিং সিস্টেম, সোলার অর্থাৎ সূর্য ঘর প্রকল্পগুলি সবই এর একেকটি পর্যায়। এতে যদি সরকার সফল হয় তাতে দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনে বিপর্যয়ই নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই সরকার ওএনজিসি, এনটিপিসি’র মতো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার বেসরকারি উদ্যোগের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
এটা ঠিক যে ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ পুনর্নবীকরণ শক্তি সৌর ও বাতাস ইত্যাদির উপরই নির্ভর করবে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সরকার সে ক্ষেত্রেও ৯৭ শতাংশের দখল দিয়ে দিয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। ফলে আগামীদিনে বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে গেলে বর্তমানের চাইতে বহুগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে জনগণকে। অথচ অন্য সব ক্ষেত্রের ন্যায় জনগণকে ধোকা দিতে সরকার জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সূর্য ঘর প্রকল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনও খরচ তো লাগবেই না, এমনকী এতে বিদ্যুৎ বিক্রি করে উপার্জনও করা যাবে। এসব সম্পূর্ণ ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। প্রশ্ন হলো সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের দায়িত্ব কেন কোনও সরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়নি? কেনই-বা সরকারিভাবে সরকারি অর্থে বেসরকারি সংস্থাকে পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হচ্ছে? সোলার প্যানেলে তো দিনে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত। অথচ বিদ্যুতের পিক-আওয়ার বিকাল ৫টা থেকে রাত্রি ১২ পর্যন্ত। ফলে দিনে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার লোক থাকবে তো? অন্যদিকে, পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ সুলভে পাওয়ার সুযোগ থাকবে তো? এসব কিছুই পরিষ্কার না করে সরকার দেশজুড়ে যেমন প্রচার চালাচ্ছে তেমনি আমাদের রাজ্যের ট্রিপল ইঞ্জিনের সরকার এবং তার বাক্যবাগীশ মন্ত্রী রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে যে সূর্যঘর প্রকল্পে নিজেই বিদ্যুৎ উৎপাদক, নিজেই গ্রাহক এবং বিদ্যুৎ বিক্রি করে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করা যাবে। কার্যত এটা আরেকটা স্মার্ট মিটার, প্রিপেইড বিলিংয়ের মতোই গ্রাহক ঠকানোর বড় মাধ্যম।রাজ্যে সরকার ও বিদ্যুৎ নিগমকে ব্যবহার করে স্মার্ট মিটার বসিয়ে বেসরকারি সংস্থা ইতিমধ্যেই রাজ্য থেকে এক হাজার কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছে।
প্রিপেইডেও বিলিংয়ের সময়ে রিচার্জ না করালে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় তা চালু করতে অগ্রিম বিল থেকে ডিস কানেকশন এবং রি-কানেকশন চার্জ কেটে নেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রযুক্তির সাথে প্রিপেইড বিলিংয়ের কোনও সম্পর্কই নেই। স্মার্ট মিটারে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রায়শই ভুতুড়ে বিলের খবর যেমন আসছে তেমনি দেখা যাচ্ছে একইরকম বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে পরেও প্রায়শই কোনও কোনও মাসে ৭০০-৮০০ টাকার বেশি অতিরিক্ত বিল আসছে। বিদ্যুৎ নিগমে এর কারণ জানতে চেয়ে কোনও প্রতিকারও পাওয়া যাচ্ছে না। মোদি সরকারের ২০২২ সালে সংশোধিত বিদ্যুৎ আইনের সুবাদে এখন বিদ্যুতের দাম ঠিক করছে বেসরকারি উৎপাদক সংস্থাসমূহ। বর্তমান সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারিত করার প্রস্তাবও উৎপাদিত সংস্থাগুলি মানছে না। এরা নিজেদের ঠিক করা মূল্যই চাপিয়ে দিচ্ছে। সরকার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদক বেসরকারি সংস্থাগুলি উন্নত প্রযুক্তির প্রচারে কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা এ আই প্রভৃতির কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তি ব্যবহৃত হোক মানুষের স্বার্থে, এটাই আমরা ভাই।
দেশে প্রযুক্তির উন্নতি আধুনিকীকরণ, টেলিকম, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ইত্যাদির উন্নতির মাধ্যমে দেশের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষো প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রযুক্তিবিদ শ্যাম পিট্রোদার হাত ধরেই শুরু হয়েছিলো। কিন্তু মোদি সরকার তাকে কর্পোরেট সংস্থার মুনাফা বাড়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে। রাজ্যেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি করার লক্ষ্যেই সরকার এবং বিদ্যুৎ নিগম এগোচ্ছে। তাদের একটা অংশের সীমাহীন দুর্নীতি, অকর্মণ্যতা, অপদার্থতা ও নির্লজ্জ স্বজনপোষণ এসবের ফলে একটা সময়ে যে বিদ্যুৎ নিগম লাভজনক সংস্থার পরিণত হয়েছিলো, বিদ্যুৎ উৎপাদনেও অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছিলো রাজ্যের চাহিদা মিটিয়েও বহিরাজ্যে এবং বহির্দেশে বিদ্যুৎ বিক্রি করা যেতো। এমন একটা সংস্থা যার ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত ছিলো ৩৫০ কোটি টাকারও বেশি। গত ৬-৭ বছরের মধ্যেই এই স্থায়ী আমানত শুধু শেষ করে দেয়নি বর্তমানে কোটি কোটি টাকা দেনার বোঝা টানতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ নিগম গত মার্চ মাসের হিসাবে দেখা গেছে ২৮৫ কোটি টাকা ক্ষতিতে চলছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাপ সঠিকভাবে পর্যালোচনা করলে পর হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে খবর বলে জানান । গত কয়েক বছরে লক্ষ্য করা গেছে পরিবাহী তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদ্যুৎ সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যুর হয়েছে মানুষের। বর্তমানে রাজ্যে ঝড় বৃষ্টির দাপট শুরু হতে না হতেই গোটা রাজ্যের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও সাত/আটদিন সমানে বিদ্যুৎ না থাকার ফলে পানীয় জল, সেচের জলের অভাব এবং এই তীব্র দাবদাহের দিনগুলিতে সাধারণ মানুষের যেমন নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তেমনি হাসপাতালগুলিতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার ফলে মোমবাতি জ্বালিয়ে অপারেশনও করতে হচ্ছে।