স্যন্দন ডিজিটাল ডেস্ক, আগরতলা, ৭ মে : গুজরাটের সুরাটে প্রায় ১০০০ বাঙালীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, উড়িষ্যাতেও হয়েছে। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত, সর্বশ্বান্ত বাঙালীরা আধারকার্ড, নাগরিক কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট, স্কুল- কলেজের বৈধ কাগজপত্র ইত্যাদি দেখিয়েও এই আক্রমন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এদেশে বংশানুক্রমে থাকার প্রমানপত্র দেখানো সত্ত্বেও মাতৃভাষা বাংলায় কথা বললেই বাঙালীদেরকে বাংলাদেশী-বিদেশী বলে দাগিয়ে দিয়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমন আনা হচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যেই অনেকে সর্বশ্বান্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
বুধবার আমারা বাঙালি রাজ্য কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই কথা বলেন আমরা বাঙালি রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল। তিনি বলেন, উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের সঞ্জয় নিষাদ নামে এক মন্ত্রী ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে ‘হিন্দি বলতে না পারলে ভারত ছেড়ে চলে যান’। তার মতে- যারা হিন্দি বলতে পারেন না হিন্দুস্তান তাদের জন্যে নয়, তারা নাকি বিদেশী। ঘটনাচক্রে প্রমানিত যে, উল্লেখিত বক্তব্য শুধু সঞ্জয় নিষাদ বাবুরই নয়, শাসক বিজেপি দলেরই বক্তব্য তথা নীতি। তাই হয়ত রাজ্যে রাজ্যে মাতৃভাষা বাংলা হওয়ার অপরাধে বাঙালীদেরকে বাংলাদেশী, বিদেশী চিহ্নিত করে বার বার আঘাত দেওয়া হচ্ছে। সে কারণেই হয়ত ২০১৯ সালে অসমে এনআরসি প্রয়োগ করতে গিয়ে অসম রাজ্যের স্থানীয় প্রায় ২০ হাজার বাঞ্জলীকে বিদেশী চিহ্নিত করা হয়েছিল। শাসকদলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে ২ কোটির অধিক বাঙালীকে বাংলাদেশী-বিদেশী চিহ্নিত করে ভারতছাড়া করার। অথচ, বাংলা ভারতবর্ষে সংবিধান স্বীকৃত ৮ম তপশীলের অন্তর্ভুক্ত ভাষা তথা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ্য, মধুরতম ও কোমল ভাষা, নোবেল পুরস্কারের ভাষা, অবিভক্ত ভারতের ভূমিপুত্র, স্বাধীনতার রূপকার বাঙালীদের মাতৃভাষা, সম্প্রতি জাতীয়স্তরে স্বীকৃত ধ্রুপদী ভাষা। অন্যদিকে, সংবিধানে যেখানে রয়েছে- যে কোন ভাষাভাষী, যে কোন রাজ্যের মানুষ যে কোন রাজ্যে গিয়ে জায়গা-জমি ক্রয় করতে পারবে, ব্যবসা-চাকুরি করতে পারবে, স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে সেখানে ভারতের অন্যসব জাতির ক্ষেত্রে উল্লেখিত নিয়ম প্রযোজ্য হলেও বাঙালীদের ক্ষেত্রে তা কেন হবেনা, কেন ব্যতিক্রম হবে?
স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে বাঙালীরা শুধুই বঞ্চনার শিকার, রাজ্যে রাজ্যে অত্যাচারিত হয়ে চলেছে। এভাবে আর চলতে পারেনা। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমরা বাঙালী দলের পক্ষ থেকে আমরা নতুন করে গুজরাট, উড়িষ্যা, দিল্লী, বিহার, অসমসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালী নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার সহ সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কাছে দাবী-অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে ক্ষতিগ্রস্থ বাঙালিদের পূর্ণক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নয়তো বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করা হবে।